বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আলোচনায় সাধারণ সম্পাদক

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শনিবার । সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি রাজপথে বিরোধী দলকে মোকাবিলাসহ নানা বিবেচনায় আনা হচ্ছে নেতৃত্ব

রফিকুল ইসলাম রনি

আলোচনায় সাধারণ সম্পাদক

উপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন আগামী শনিবার। এ সম্মেলনে সবার দৃষ্টি কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা ওবায়দুল কাদের পুনরায় আরেক মেয়াদে থাকছেন নাকি নতুন কাউকে শেখ হাসিনা রানিংমেট হিসেবে বেছে নেবেন- এ চমক দেখার অপেক্ষায় সংগঠনটির তৃণমূলের লাখো কোটি নেতা-কর্মীসহ দেশবাসী। এ নিয়ে আলোচনা দলের ভিতরে-বাইরে। সবকিছু পরিষ্কার হবে শনিবার বিকালের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে। এর আগে সকালে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, সভানেত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই থাকছেন তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বরাবরের মতো এবারও সারা দেশ থেকে আগত কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগকে পরিচালনার ভার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টানা দশম বারের মতো সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হবে উপমহাদেশের অন্যতম দক্ষ রাজনীতিক শেখ হাসিনাকে। এরপর তাঁর রানিংমেট সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী সংসদের পুরো টিম সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে তাঁকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের অস্তিত্ব তথা রাজনীতিতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পরে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। ফলে তিনি টানা ৪২ বছর দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর একক নেতৃত্ব এবং ইমেজের কারণে আওয়ামী লীগকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছেন। আওয়ামী লীগকে চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশের যত সাফল্য তা শেখ হাসিনার হাত ধরেই এসেছে। দ্বিতীয় অধিবেশন পরিচালনা করবেন সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। প্রথমে একজন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করবেন, আরেকজন সমর্থন করবেন। সভানেত্রী পদে কোনো প্রার্থী না থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভানেত্রী নির্বাচিত হবেন। এরপর তাঁর পরামর্শে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুরূপভাবে একজন প্রস্তাব, আরেকজন সমর্থন করবেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ওই মঞ্চেই ঘোষণা করা হতে পারে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নাম। এরপর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের নাম। একইভাবে ঘোষণা করা হতে পারে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের নাম। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, এবার নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিবেচনায় থাকছে দলের সব স্তরে গ্রহণযোগ্যতা। সেই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়েও আছে ভাবনা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি, রাজপথে বিরোধী দলকে মোকাবিলাসহ নানা বিষয় বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশব্যাপী পরিচিতি রয়েছে, কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন তারকা নেতাদেরও এবার দলীয় পদে আনা হতে পারে। দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন সফল করতে ১২টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১টি উপকমিটি ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন বৈঠক করছে। সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। জেলার প্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিলরদের নামও চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে বিভাগ অনুযায়ী পৃথক বুথে শুক্রবার জেলার নেতাদের হাতে কাউন্সিলর কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে। সম্মেলন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছেন উপকমিটির সদস্যরা। গতকাল সকালে খাদ্য কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খাদ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ। গতকাল বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ পরিদর্শনে যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অর্থ-উপকমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফর উল্লাহ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, প্রথম অধিবেশনের পরে দ্বিতীয় অধিবেশনের আগে নামাজ ও খাওয়ার জন্য একটা বিরতি হবে। তারপরই আমাদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৭ হাজার কাউন্সিলরের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি করা হবে। সেই অপেক্ষায় আমরা সবাই থাকব। তার সঙ্গে ছিলেন মঞ্চ সাজসজ্জা উপকমিটর আহ্বায়ক ও দলটির প্রেসিয়িাম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সদস্য সচিব মির্জা আজম। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আইন সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, সানজিদা খানম, সাহাবুদ্দিন ফরাজি, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, হুইপ ইকবালুর রহিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সিদ্দিকী নাজমুল আলম, সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতারা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর