প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেড় দশকের নৃশংস দমনপীড়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছে। বিচার বিভাগ ভেঙে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ঢাকায় একটি হোটেলে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারসহ জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূসের ছিল এটাই প্রথম কূটনীতিক ব্রিফ। ড. ইউনূস শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো বর্বরতার বর্ণনাও দেন বিদেশি কূটনীতিকদের। পরে সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের পুরোপুরি সমর্থন চেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ মারা গেছে। হাজারো মানুষ আওয়ামী লীগ ও তার দলবলের দ্বারা আহত হয়েছে। অনেক ছাত্র চোখে গুলি খেয়েছে, আমি তাদের দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা জানি না, ওদের কী হবে। পৃথিবীর কোনো দেশের ছাত্রদের এত ত্যাগ করতে হয়নি। পৃথিবীর কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়নি। তিনি বলেন, একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছে, যেখানে জনগণ তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে এবং মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে সক্ষম হবে এবং সরকার গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখবে। ছাত্রদের এই স্বপ্ন আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞ, সংকটকালীন তারা আমাদের সহায়তা করেছে। বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। দুই সপ্তাহ হলো বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। আমাদের জনগণ এবং দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর অটল সহযোগিতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পুলিশ বাহিনীও তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে যত দিন লাগবে তত দিন সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের বীর ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রকাঠামোর দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন চায়। এটি একটি কঠিন যাত্রা এবং সেই পথে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হবে আমাদের। যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই ভালো। দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। দেশের জনগণের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। দেশে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্তকে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তিনি চান এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তদন্তে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সরকার সহায়তা দেবে। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ যতগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে, তার সব বাস্তবায়ন করবে সরকার।