শীতে মোড়া থাকতে থাকতে অভ্যাসটাই যেন বদলে গেছে। শীতকালীন সাজ-পোশাকের অভ্যাসের সঙ্গে গরমের দিনে বিস্তর ফারাক। বুঝেশুনে ব্যবস্থা না নিলে অস্বস্তিতে পড়তে হবে সবখানে। আর বসন্ত দিনে না মেলে পোশাকে স্বস্তি না ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায়। তাই প্রথমে হতে হবে সচেতন। আর বিস্তারিত জেনে নিতে হবে সময়ের রূপকাহন সম্পর্কে।
শীত উড়িয়ে শুরু হয়েছে গরমের ঝাপটা। সঙ্গে রয়েছে ধুলোবালি আর মাঝেমধ্যে বৃষ্টির হানা। এই সময়ে বাইরে বের হলে গরম, ঘাম আর ধুলোয় চরম অস্বস্তি তৈরি হয়। এ অবস্থায় স্বস্তি পেতে দরকার উপযোগী সাজ-পোশাক। তাহলে কেমন হতে পারে সময়-উপযোগী রূপকাহন?
তীব্র রোদের তাপে, ঘামে আর ধুলোয় মাখামাখি হয়ে ভোগেন দারুণ অস্বস্তিতে! তাই ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই স্বচ্ছন্দদায়ক পোশাকটি বেছে নিন। এ সময়ের পোশাক পাতলা সুতি হলেই ভালো। এখনকার পোশাক একটু হালকা-পাতলা হলে অস্বস্তি কম লাগে। এ ছাড়া একটু ঢিলেঢালা পোশাক হলে গরমে হাঁসফাঁস লাগবে না। বর্তমানে ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে মেয়েরা নানারকম আরামদায়ক ফেব্রিকের কুর্তি পরছেন। এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর পরতেও আরামদায়ক। এর সঙ্গে টাইডস বা প্লাজো বেশ মানিয়ে যায়। এ ধরনের পোশাক যেমন ট্রেন্ডি তেমন আরামদায়ক। কেউ কেউ এ সময়টাতে শাড়ি বেছে নেন। শাড়ি পরলেও তাঁতের শাড়িতেই আরাম পাবেন বেশি। তবে দীর্ঘকাল ধরে বাঙালি নারীর পছন্দের একটি জায়গা দখল করে আছে পাতলা জর্জেটের প্রিন্টেড শাড়ি। নানা রঙের নজরকাড়া এসব শাড়ি গরমের দিনে পরতে দারুণ আরামদায়ক। ঝামেলাহীনভাবে বারবার একই শাড়ি পরা যায়। বারবার ধোয়া বা আয়রন করার ঝামেলাও থাকে না। পরার সময় দ্রুত সেট হয়ে যায়। তাই অতিরিক্ত সময়ও নষ্ট হয় না। মূলত গরম উপযোগী পোশাক মানেই ঝামেলাহীন। এ ধরনের পোশাকে দ্রুত রেডি হওয়া ও আরাম ধরে রাখা সম্ভব।
♦ এবার আসা যাক মেকআপের বিষয়ে, গরমের সময় মেকআপ করতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে ঘামের কথা। সঙ্গে ধুলোবালি তো আছেই। ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির হলে তো আরও সমস্যা। রোদে গেলেই মুখটা কেমন লালচে আর তেলতেলে হয়ে যায়। এটা খুবই বিরক্তিকর। তাহলে উপায় কী? এ সময় বাইরে যাওয়ার আগে খুব হালকা ও ন্যাচারাল মেকআপ করাই উচিত। খুব হালকা মেকআপেও কিন্তু নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। প্রথমে মুখটা পরিষ্কার করে ধুয়ে এক টুকরো বরফ ঘষে নিন। তারপর লাগান সানস্ক্রিন। সানস্ক্রিন বাইরে যাওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগেই লাগাতে হয়। এরপর বেইজ মেকআপ করুন। এ সময়ে বেইজের ক্ষেত্রে ভারী ফাউন্ডেশন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। গরমে লিকুইড নয় বরং ম্যাট ফাউন্ডেশন দিয়ে বেইজ করুন। এতে মেকআপ সহজে গলবে না।
ত্বক যদি তৈলাক্ত প্রকৃতির হয় তাহলে রোদে গেলে খুব দ্রুত ঘামাবে আর তৈলাক্ত হয়ে যাবে। এবার জেনে নেওয়া যাক সময়োপযোগী সাজসজ্জা সম্পর্কে।
অফিস বা ক্লাস
আমরা যারা নিয়মিত অফিস বা ক্লাসে যাই তাদের জন্য সাজগোজ মেইনটেইন করাটা প্রতিদিনের ব্যাপার। অফিসে কিংবা ক্লাসে যেতে সহজে যে সাজ হয় তা বেছে নেওয়াই উত্তম। তবে রোদ পেরিয়ে যেতে এ সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী এসপিএফ ২০-৪৫ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার উপযোগী হবে। ত্বকের দাগছোপ ঢাকতে ব্যবহার করুন কনসিলার। ত্বকের রঙের চেয়ে এক শেড হালকা কনসিলার ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পাউডার বেস্ড ও শুষ্ক ত্বকের জন্য দরকার লিকুইড বা ক্রিম ফাউন্ডেশন কিংবা টিনটেড ময়েশ্চারাইজার। ভ্রু-পেনসিল ব্যবহার না করে ইদানীং মেয়েদের ঝোঁক ব্রাশ দিয়ে ভ্রুটা সুন্দর করার প্রতি। অফিসে আইশেড বা লিপস্টিকে উজ্জ্বল রং এড়িয়ে চলা ভালো। চোখের সাজে ঘন করে কাজল দিন। হালকা সোনালি বা বাদামি রঙের শ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ দিনে নিতে পারেন লাইট ব্লু, পার্পল, গোল্ড, সিলভার ও ব্রাউন শেডের কালারগুলো। ব্লাশন ব্যবহার না করে কনট্যুর করে চিকবোনটা একটু ডার্ক করে নিতে পারেন। সব সময় যে এ ফরমুলা মানবেন তাও না। লিপগ্লসই আদর্শ নির্বাচন হবে অফিসে। অফিস বা ক্লাসে এসির ঠান্ডা বাতাস ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। অফিসে এক সেট ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ও লোশন রাখুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঠোঁটে ভ্যাসলিন বা গ্লস লাগিয়ে নিন।
দিনের সাজ
দিনের বেলা দাওয়াতে গেলে সাজটা সাধরণ হওয়াই ভালো। এজন্য প্রথমে ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন লাগিয়ে তারপর ফাউন্ডেশন লাগান। মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হবে। ত্বক শুষ্ক হলে আগে বিবি বা সিসি ক্রিম লাগিয়ে তারপর ফাউন্ডেশন লাগান। চেহারার গড়ন অনুযায়ী প্রয়োজনমতো কনট্যুরিং করুন। নাক একটু টিকোলো দেখানোর জন্য নাকের দুই পাশে গাঢ় শেডের কনসিলার দিয়ে ওপরে লম্বা করে হালকা শেডের কনসিলার দিন। নাকের দুই পাশ ও কপালের দুই পাশ কিছুটা ডার্ক করে নিন। এতে টিজোনকে হাইলাইট করা সহজ হবে। ত্বক যা-ই হোক, ফেস পাউডার দিয়ে শেষ করুন বেইস মেকআপ। আইভ্রুর ঠিক নিচের অংশে সিলভার, সাদা বা হালকা সোনালি হাইলাইটার ব্যবহার করুন। আইশ্যাডো দেওয়ার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে পারেন চলতি কোনো ট্রেন্ড শেড। মাশকারা লাগালে চোখের পাতা ঘন ও আর্কষণীয় লাগবে। যারা কাজল ও আইলাইনার পছন্দ করেন, তারা চোখ টেনে দিতে পারেন। এ সময় ম্যাট লিপস্টিক উপযোগী। খুব বেশি উজ্জ্বল রং চাইলে প্রথমে লিপস্টিক দিয়ে তার ওপর ন্যাচারাল লিপগ্লস দিন।
রাতের সাজ
রাতের সাজে বেইস মেকআপ দেওয়ার পর গোলাপি, পাম বা স্ট্রবেরি লাল ব্লাশন ফরসা ত্বকের সঙ্গে খুব ভালো মানায়। আর যাদের গায়ের রং কালো তাদের জন্য কোরাল অথবা পিচ রঙা ব্লাশন আদর্শ। ব্লাশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে গালের মানানসই জায়গাটা বেছে নেওয়াও জরুরি। চেহারার গঠন মেনে তবেই এটি ব্যবহার করা উচিত। মুখ গোলাকার হলে গালের পাশে চিকবোন ‘সি’ শেপের মতো করে ব্লাশন লাগান। এতে মুখটা চাপা দেখাবে। চার কোনা যাদের মুখ, তারা চোখের নিচবরাবর গালের ওপর থেকে চিকবোনের শেষ পর্যন্ত ব্লাশন লাগান। তারপর গাল, কপাল ও নিচে ব্লাশন লাগিয়ে নিন। ডিম্বাকার মুখে চিকবোনের বেশি সুস্পষ্ট জায়গা থেকে ব্লাশন দিয়ে কানের পাশের জুলফি পর্যন্ত টেনে নিন। শুধু গালেই নয়, রাতের মেকআপে দ্যুতি ছড়াতে কপাল, টেম্পল এবং ব্রাওবোনে হালকা করে বুলিয়ে নিতে পারেন ব্লাশন। সব শেষে মুখের হাইলাইটেড জোনে শিমার বা শাইনি পাউডার বুলিয়ে নিন। রাতের পার্টিলুক পাবেন পুরোপুরি। এবার কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে বেইস শেষ করুন। রাতের অনুষ্ঠানে চোখের সাজকে গুরুত্ব দিন। চোখ সাজাতে হবে চোখের শেপ অনুযায়ী। প্রথমে আইভ্রু এঁকে নিন। ভ্রু সেট করার জন্য ব্রাশে কিছুটা জেল বা হেয়ার স্প্রে দিতে পারেন। এবার পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে শ্যাডো বেছে নিন। একটু গ্লসি শ্যাডো রাতে যোগ করবে বাড়তি চমক। শ্যাডো লাগানোর ক্ষেত্রে স্পঞ্জ বা ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। আঙ্গুল দিয়েও কাজ সেরে নেওয়া যাবে। গাঢ় করে লাইনার দিন। চাইলে স্মোকি সাজ দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক ভালো মানাবে। আর ডার্ক লিপস্টিক চাইলে চোখের সাজটা একটু নিয়ন্ত্রণেই রাখুন।
টিপস
♦ গরমে বের হওয়ার সময় সঙ্গে ছাতা নিন। রোদে পুড়লে শরীর খারাপ হবে, ত্বকেও সানবার্ন হবে।
♦ ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।
♦ বেশি করে পানি ও ফল খাবেন। তাহলে ক্লান্তি আসবে না।
♦ বাইরে থেকে ফিরে ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করুন। ধুলো-ময়লা লেগে থাকলে ব্রণের উপদ্রব বাড়বে।
♦ গরমকালে মেকআপের সামগ্রী ও ধরনে পরিবর্তন আনতে হয়। এ মৌসুমে পণ্যগুলো সাধারণত শীতকালের তুলনায় হালকা, সতেজ ও উজ্জ্বল হয়।