কুয়ায়ালালামপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ঝুলছে চীনা লাল কাপড়ের বিশেষ রঙিন বাতি। বিপনী বিতানগুলোকে সাজানো হয়েছে নানান রংয়ের ফিতে, রঙ্গিন বাতি ও ছোট লেবু গাছের টব দিয়ে। প্রতিটি বিপনীবিতানেই করা থাকে অস্থায়ী মঞ্চ। সেই মঞ্চও সাজানো হয়েছে নিপুণভাবে। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত ব্যাপী সেই মঞ্চেই চলে নানান অনুষ্ঠান। বিকেল থেকে যেন তিল ধারনের ঠাঁই থাকে না বিপনী বিতানগুলোয়। স্থানীয়রা ছাড়াও মালয়েশিয়া পর্যটন নগরী হওয়ায় থাকে নানান বর্ণ-শ্রেণীর মানুষ। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের কয়েক লাখ শ্রমিকের আবাসস্থল হওয়ায় মনে হয় যেন এক একটি মিলনমেলা। এমন নয়নাভিরাম পরিবেশের সাক্ষী না হলে কি চলে? তাইতো চলে সেলফি তোলারও হুড়োহুড়ি। এতো আয়োজন! কিন্তু কিসের? সেটাইতো বলা হলো না। হুম বলছি, আসছে চীনা নববর্ষেকে কেন্দ্র করে মালয়েশিয়ায় মহা সাজসজ্জার কথা।
চীনা নববর্ষ উপলক্ষ্যে মালয়েশিয়ার প্রতিটি শহর, বিপনিবিতান ও বাড়িগুলোকে সাজানো হয়েছে চায়নিজ বিশেষ কাপড়ের রঙিন সাজে। চন্দ্র বর্ষের প্রথম দিনটিকে চীনারা নববর্ষ হিসেবে পালন করে থাকে। এই উৎসবকে বলা হয় 'চুন জি'। চীনারা তাদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে। নতুন বছর আসলে কোন তারিখ থেকে শুরু হবে এর কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কারণ এই তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তন হয়!বর্ষপঞ্জি অনুসারে এ বছর ফেব্রুয়ারির পাঁচ তারিখ থেকে চীনাদের নতুন বছর শুরু হচ্ছে। চীনাদের নববর্ষ আর বসন্ত দুটোই আগমন হয় একই সময়ে।
চীনা নববর্ষ উৎসব মূলত বছরের শেষ মাসে ক্রিসমাস উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে যায়, বাকি থাকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা। ক্রমান্বয়ে সেই উৎসবের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চায়নিজদের মাঝেও। তারই ধারবাহিকতায় সেই ঢেউয়ের আঁচ লাগে তিন জাতির দেশ (মালয়, তামিল, চায়নিজ) মালয়েশিয়ান চায়নিজদের মাঝেও।
মালয়েশিয়াতে চীনা নববর্ষ মানে লম্বা ছুটি আর মোটা অংকের বোনাস। যেখানে মালয়েশিয়ায় অনেক সময় বিদেশী শ্রমিকরা ঈদের দিনও ছুটি পায় না, সেখানে বেশিরভাগ মিল কারখানার মালিক চায়নিজ হওয়ায় সরকারিভাবে চায়নিজ নিউ ইয়ারে দু'দিন ছুটি হলেও চায়নিজরা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে প্রায় এক-দুই সপ্তাহ। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে মেলে বেতন সমান ডাবল বোনাসও।
সারা বছর পুরো মালয়েশিয়া জুড়ে কোথাও কমলার দেখা না মিললেও চীনা নববর্ষকে কেন্দ্র করে মোড়ে মোড়ে বসে কমলার স্টল, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয় কমলা। কারণ কমলা ছাড়া যে নিউ ইয়ারই বৃথা। চীনা নববর্ষ এ মালয়েশিয়ায় থাকে কমলার ছড়াছড়ি। সকল শ্রমিক ও চায়নিজ সকল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের উপহার দেন কমলা।
নতুন বছরকে তারা একেক বছর একেকটি প্রাণীর নামে নামকরণ করে থাকে। নির্দিষ্ট ১২টি প্রাণীর নাম ঘুরেফিরে রাখা হয় একেক বছর। এ বছরকে চীনা ক্যালেন্ডার মতে চীনা নববর্ষ আসছে শুকর বর্ষ হিসেবে। বাকি ১১টি প্রাণী হচ্ছে: ইঁদুর, ষাঁড়, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ভেরা, মোরগ, কুকুর এবং ভাল্লুক।
এশিয়ার ইউরোপ খ্যাত পর্যটন দেশ মালয়েশিয়ার সৌন্দর্য্যের বর্ণনা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না কখনো। এ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমিকে যদি আবার সাজানো হয় এমন বর্ণিলভাবে, তাহলে তো পুরো দেশটাই যেন স্বপ্নপূরী। ঠিক এ মুহূর্তে সারা মালয়েশিয়াকে স্বপ্নপূরীর মতই মনে হচ্ছে। কারণ আর কয়েকদিন পরেই মালয়েশিয়ায় চায়নিজদের সবচেয়ে বড় উৎসব 'চীনা নববর্ষ' (Gong xi fa cai) ।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা