যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘ ফোনালাপ হয়। এতে ‘বড় ধরনের অগ্রগতি’ হয়েছে দাবি করে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পরবর্তী বৈঠকে বসবেন তারা। তবে বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখ জানাননি তিনি।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হয়েছে। দুই নেতা শিগগিরই হাঙ্গেরিতে মুখোমুখি বৈঠক করবেন বলেও সম্মত হয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ের পর পুতিনের সঙ্গে এটি তার প্রথম কথা। ফোনালাপটি ছিল ‘খুবই ফলপ্রসূ’ এবং ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিদল আগামী সপ্তাহে আলোচনায় বসবে।
যদিও ট্রাম্প এখনো বুদাপেস্টে বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখ জানাননি, ক্রেমলিন জানিয়েছে যে ‘খোলামেলা ও বিশ্বাসভিত্তিক’ ওই ফোনালাপের পরপরই বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু হবে।
এই আলাপটি এমন এক সময় হলো, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার হোয়াইট হাউস সফরে যাচ্ছেন, এবং ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে গভীর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
মার্কিন সফরে পৌঁছে জেলেনস্কি বলেন, টমাহকের কথা শুনেই মস্কো আলোচনায় ফিরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ফোনালাপ শেষে ট্রাম্প লেখেন, তিনি ও পুতিন ‘ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।’
তিনি জানান, দুই দেশের ‘উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টারা’ আগামী সপ্তাহে বৈঠকে মিলিত হবেন, যেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নেতৃত্ব দেবেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি শুক্রবার জেলেনস্কিকে পুতিনের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে অবহিত করবেন এবং যোগ করেন, ‘আজকের ফোনালাপে আমরা বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছি বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি পরে সাংবাদিকদের বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই তার সঙ্গে পুতিনের মুখোমুখি বৈঠক হতে পারে।
ফোনালাপের পর ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আমাদের টমাহক মজুত ফুরিয়ে ফেলতে পারি না। আমাদেরও এগুলোর দরকার আছে। তাই এখনই কিছু বলা কঠিন।’
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলগা স্তেফানিশিনা বলেন, ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়া ইউক্রেনে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা “শান্তির প্রতি মস্কোর প্রকৃত মনোভাব প্রকাশ করে।”
বিবিসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিবিএস-কে তিনি বলেন, “এই হামলাগুলো দেখায়, রাশিয়ার কৌশল ভয় দেখানো ও ক্লান্ত করে দেওয়া। এর একমাত্র কার্যকর জবাব হলো চাপ—আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা, শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ও দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্র সরবরাহ।”
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, বুদাপেস্টে সম্ভাব্য বৈঠক “বিশ্বের শান্তিপ্রেমী মানুষের জন্য দারুণ খবর।”
তিনি আরও বলেন, “শান্তির জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, শক্তি ও বিনয়। ইউরোপের উচিত যুদ্ধ উসকে না দিয়ে আলোচনার পথ খোঁজা। কেবল সংলাপই আমাদের মহাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।”
গত আগস্টে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ট্রাম্প পুতিনের প্রতি আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ওই বৈঠকে ট্রাম্প আশা করেছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্টকে সমন্বিত শান্তি আলোচনায় রাজি করাতে পারবেন।
এরপর তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাঝপথে পুতিনকে ফোন করেন, তবে এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে আর কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ নিশ্চিত হয়নি।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু ক্ষমতায় ফেরার পর তিনি স্বীকার করেন, এই সংঘাত মেটানো তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জগুলোর একটি।
আগে রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে দেখা গেলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অনেক উন্নত হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, তিনি এখন বিশ্বাস করেন ইউক্রেন “তার সম্পূর্ণ ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম”, যা আগের অবস্থান—রাশিয়া-অধিকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ—থেকে একেবারে ভিন্ন।
শুক্রবারের বৈঠকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি আলোচনার অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হতে পারে।
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে এই উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যার পাল্লা ২,৫০০ কিলোমিটার (১,৫০০ মাইল)। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, “দেখা যাক... হয়তো দেব।” সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজিম