সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

উপমহাদেশের সব দেশেই শিক্ষণীয় তিনি

বঙ্গবন্ধুকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাঁর পরিচ্ছন্ন চিন্তা ও দৃষ্টির সম্পদ কেউ আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না...

উপমহাদেশের সব দেশেই শিক্ষণীয় তিনি

অমর্ত্য সেন

শেখ মুজিবের সুচিন্তা থেকে আজকের বাঙালিরও শেখার আছে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান রাজনৈতিক নায়ক, বাংলার সবচেয়ে সমাদৃত মানুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। বঙ্গবন্ধুকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাঁর পরিচ্ছন্ন চিন্তা ও দৃষ্টির সম্পদ কেউ আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। বর্তমান ভারতের পক্ষে তো বটেই, বঙ্গবন্ধুর ধারণা ও চিন্তা উপমহাদেশের সব দেশের পক্ষেই শিক্ষণীয়। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে বাংলাদেশ অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তিনি কেমন বাংলাদেশ চান, বঙ্গবন্ধু সে কথা পরিষ্কার করে বলেছিলেন। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকায় বাংলাদেশের আইন সভায় সেদিনের নবীন ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের সংবিধান গ্রহণের সময় তিনি বলেছিলেন : ‘আমরা ধর্মাচরণ বন্ধ করব না... মুসলমানরা তাঁদের ধর্ম পালন করবেন... হিন্দুরা তাঁদের ধর্ম পালন করবেন... বৌদ্ধরা তাঁদের ধর্ম পালন করবেন... খ্রিস্টানরা তাঁদের ধর্ম পালন করবেন... আমাদের আপত্তি শুধু ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারে। শেখ মুজিব এবং আকবর, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি যেভাবে পরিষ্কার করেছিলেন, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া কেবল ভারতে নয়, অনেক দেশেই গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকায় বা ইউরোপে অনুরূপ নানা বৈষম্য, যেমন জাতিগত বা নৃগোষ্ঠীগত অসাম্যবিষয়ক রাজনৈতিক আলোচনাতেও এই ধারণা প্রাসঙ্গিক। শেখ মুজিব যে কেবল ধর্মনিরপেক্ষতাকে সক্ষমতা প্রসারের জায়গা থেকে দেখেছিলেন তা নয়, সাধারণভাবেই সক্ষমতার গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। বস্তুত যে মাতৃভাষার দাবি আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সক্ষমতার প্রশ্নটি ছিল তার একেবারে কেন্দ্রে, মাতৃভাষা ব্যবহারের সক্ষমতার দাবির সঙ্গে বাঙালি জাতির ধারণাটিও ওই সংগ্রামের মধ্য  দিয়ে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

 অমর্ত্য সেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।

[আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে]

সর্বশেষ খবর