শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

আরতি অঞ্জলি দান, প্রসাদে কুমারীপূজা

আজ একসঙ্গে মহানবমী বিজয়া দশমী

আরতি অঞ্জলি দান, প্রসাদে কুমারীপূজা

ভক্তকুলের বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় গতকাল দুর্গোৎসবের অষ্টমীতে দেশব্যাপী পালিত হয়েছে ‘কুমারীপূজা’। মহাঅষ্টমীতে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে আরতি, অঞ্জলি দান ও প্রসাদ নেওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ পূজা। সকাল থেকেই ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। পূজারিদের মতে, কুমারীপূজার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজে নারীর পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা প্রকাশ পায়। শারদীয় দুর্গোৎসবে আজ বিজয়া দশমী। আজ একই সঙ্গে মহানবমীর পূজাও অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, নবমী এবং দশমী তিথি একই দিন হওয়ায় আজ সারা দেশে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। তবে আজ দশমীর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও বিজয়া মিছিলের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন হবে আগামীকাল। গতকাল রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে মহাঅষ্টমীর কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারীপূজা শুরু হয়। এর আগে কুমারী কন্যাকে স্নান করিয়ে নতুন পোশাক, ফুলের মালা ও অলঙ্কারে দেবীরূপে সাজানো হয়। এবার রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের ‘কুমারী’ অন্বেষা মুখোপাধ্যায়। তবে শাস্ত্রমতে এদিন তার নতুন নাম দেওয়া হয় ‘মালিনী’। লাল বেনারসি পরে, বাবার কোলে চড়ে সকাল সাড়ে ১০টায় মাতৃরূপে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন ‘কুমারী দেবী’। এ সময় হাজারো ভক্ত জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করে নেন তাকে। শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প এবং বায়ুর উপাচারে মন্ত্রপাঠে চলে কুমারীপূজা। স্বামী স্থিরাত্মানন্দ মহারাজ পূজা পরিচালনা করেন। জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় ও মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের কন্যা অন্বেষা মতিঝিল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। সে ২০০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করে। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে অন্বেষা বলে, ‘সবাই আমাকে পূজা দিয়েছে, আমার খুবই ভালো লেগেছে।’ রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহারাজ বলেন, ‘নারী জগদ্দাত্রীর অংশবিশেষ। সমগ্র বিশ্বে তিনি মহামায়ারূপে প্রকাশিত। কুমারীতেই সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি-পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি, সব কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্মরূপে বিরাজিত। তাই কুমারীপূজা।’ কুমারীপূজা উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ভক্তদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান ছিল গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ। সকাল থেকে ভক্তরা সেখানে ভিড় জমাতে থাকেন। তবে নারীভক্তদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি। নারী কণ্ঠে উলুধ্বনির পাশাপাশি ভক্তদের কণ্ঠে ধ্বনিত ‘জয়, দুর্গা মাইকি জয়’। এ ছাড়া কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি ও ঢাকের বাদ্যিতে রামকৃষ্ণ মঠে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তবে ষষ্ঠী ও সপ্তমীর চেয়ে গতকাল অষ্টমীর দিন রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তদের উপস্থিতি ছিল বেশি। আজ মহানবমীতে রামকৃষ্ণ মিশন মঠে পূজা আরম্ভ হবে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে। নবমী তিথি সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। পরে দশমী তিথি শেষ রাত ৪টা ৩৭ মিনিট ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত। সকাল ৬টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর কেবল মহানবমী কল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা প্রশস্তা দিবা ৮টা ৫৯ থেকে ৯টা ৫৮ এর মধ্যে। আজ দিবাগত রাত ৪টা ৩৭ মিনিটের মধ্যে দশমী শেষ হবে। তবে প্রাতঃ ৬টা ৫৪ মিনিট গতে পূর্বাহ্ন ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে কুলিক বেলা এবং বিহিত লগ্নানুরোধে সকাল ৮টা ২৩ মিনিটের মধ্যে দশমী বিহিত পূজা সম্পন্ন হবে। একই দিন মহানবমী ও দশমী অনুষ্ঠিত হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ জানান, বহু বছর পর এবার এ ধরনের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটল।

সর্বশেষ খবর