রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

হাইটেক পার্কে বিলিয়ন ডলারের হাতছানি

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

হাইটেক পার্কে বিলিয়ন ডলারের হাতছানি

প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে গড়ে তোলা হচ্ছে হাইটেক পার্ক। যেখানে হাতছানি দিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। আইসিটির যথাযথ উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও বেগবান করতেই হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, হাইটেক পার্কে ১০ লাখ আইটি পেশাদার তৈরির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বছরপ্রতি রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি বাড়বে। জিডিপিতে আইটি খাতের অবদান হবে ১ শতাংশ। তিনি বলেন, সারা দেশে ৫৩ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সহজেই সরকারি সব সেবা নিতে পারছেন। জয় বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছুর অভাব আছে সত্য। কিন্তু অভাব নেই মেধার। এই মেধা কাজে লাগিয়ে আইটি কোম্পানি আর গুগল-ফেসবুক বাংলাদেশেই গড়ে তোলা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এ সেক্টর গার্মেন্টকে ছাড়িয়ে যাবে। ইতিমধ্যে এর আয় ২৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।’ জয় আরও বলেন, সরকারি সব মন্ত্রণালয়, অধিদফতরের সঙ্গে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থার লক্ষ্যে কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১২টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরে গড়ে তোলা হচ্ছে হাইটেক পার্ক। উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য এখানে থাকছে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। অর্ধ শতাধিক একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে বিশ্বমানের। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও গড়ে তোলা হচ্ছে আরেকটি হাইটেক পার্ক। পাশাপাশি চট্টগ্রামকে করা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নগরী। হাইটেক পার্ককে কেন্দ্র করে বদলে যাবে দেশের আইটি সেক্টর। এতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলতে শুরু হয়েছে আইটি সেক্টরে। তথা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আরেকটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস উঁকি দিচ্ছে। সৃষ্টি হবে হাইটেক পার্ককেন্দ্রিক মানুষের কর্মসংস্থানের। দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশিত আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক) এ সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আর এতে বর্তমান সরকার আরেকটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এর ফলে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। হাইটেক পার্ক নির্মাণের ফলে সারা দেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন আইটিনির্ভর কাজকর্ম সমাধা করা যাবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জীবিকার ধারা বদলাবে; যা অর্থনীতিতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গাজীপুর ও চট্টগ্রামের হাইটেক পার্ককে ঘিরে আইটিতে অর্থনীতির নতুন এক দিগন্ত দেখছে দেশবাসী। হাইটেক পার্কসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হাইটেক পার্কের গুরুত্ব অনেক। এর ফলে আইটি সেক্টরের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা সেক্টরের প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন কাজ দ্রুত বিকশিত হবে। গাজীপুরের হাইটেক পার্কটি ৩৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। এ পার্কে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য থাকবে দুই তলা ভবন, ছাত্রাবাস, আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। এ ছাড়াও হাইটেক পার্কে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাও (যেমন উচ্চগতির ইন্টারনেট, নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগব্যবস্থা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করা) শিক্ষার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগের যৌথ অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হবে। আইসিটি বিভাগ সিন্ডিকেশন এবং পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে বলে জানা গেছে। আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)-এর পর দেশের ষষ্ঠ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পাবে গাজীপুরের এই ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি এবং আইটিইএসের (আইটি অ্যান্ড আইটি অ্যানাবল্ড সার্ভিসেস) ওপর পড়াশোনা করা যাবে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট, অ্যাডভান্সড টেকনোলজি বিষয়েও এখানে শিক্ষা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি থাকবে উচ্চতর বিষয় নিয়ে গবেষণার সুযোগ। মূলত হাইটেক পার্কের মানবসম্পদ নেওয়া হবে দেশের একমাত্র ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটপুট হবে হাইটেক পার্কের ইনপুট। হাইটেক পার্ককে সাপোর্ট দিতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থাৎ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করলেই চাকরি নিশ্চিত। কর্মক্ষেত্রও প্রস্তুত। শিক্ষার্থীর চিরচেনা ক্যাম্পাস হাইটেক পার্ক- এমন একটি স্বপ্ন নিয়েই গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সালের ১৫ মার্চ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে হাইটেক পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২২৬ কোটি টাকার হাইটেক পার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। এর আগে ১৯৯৯ সালের ১৭ জুলাই হাইটেক পার্ক গঠনের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার। ২০০৪ সালে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে হাইটেক পার্কের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রায় ২৩২ একর জায়গা হস্তান্তর করে ভূমি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রযুক্তিনির্ভর এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে মাল্টিডিসিপ্লিনারি ও গবেষণাভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিংকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা কোনো কারণে ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলে (যৌক্তিক কারণে) স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি ঘরে বসে বা দেশ-বিদেশের যে কোনো জায়গা থেকে ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়াও বিশ্বের নামজাদা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে করানো হবে বলে জানা গেছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ক্রেডিট ট্রান্সফারেরও ব্যবস্থা থাকবে। পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে। বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও একই পদ্ধতিতে ভর্তি হতে হবে। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ভবিষ্যতে কোটা পদ্ধতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সেই দাবি এখন পূরণ হওয়ার পথে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় হাইটেক পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে নিড বেসিসে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, দেশে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে চট্টগ্রামকে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় ৯৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হবে দেশের প্রথম সাইবার সিটি। তা ছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ৩০০ একর জমির গড়ে তোলা হবে হাইটেক পার্ক। আগামীতে এগুলো হবে দেশের ডিজিটাল কর্মসূচির অন্যতম গর্বিত অংশীদার।

সর্বশেষ খবর