শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুখবর নেই শেয়ারবাজারে

আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা

আলী রিয়াজ

দিনের পর দিন দরপতন অব্যাহত রয়েছে শেয়ারবাজারে। কোনোভাবেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না বাজারে। মুনাফা দূরে থাক নিজের বিনিয়োগের টাকা ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আস্থাহীন বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর নেই শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে। শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারে মূল মার্কেটের পাশাপাশি আইপিওতেও অস্থিরতা চলছে। নানা ঘটনার পর এখনো বাজারে ভুয়া কোম্পানির শেয়ারের আইপিও আসছে। এসব কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, ঈদের আগে বাজারে কিছুটা উল্লম্ফন দেখা দিলেও তা টিকে থাকেনি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভরসা ঈদের আগে কিছুটা মুনাফা করার। কিন্তু গত কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ২৮৮টি কোম্পানির প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠানেরই শেয়ার দর কমেছে। ধারাবাহিক

দরপতনের কারণে গত ১৫ দিনেই বাজার মূলধন প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে হলে বৃহৎ মূলধনী কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া বাজার মনিটরিংয়ে এখনো ঘাটতি থাকায় বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছে না। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। জানুয়ারি মাসে শেয়ারবাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে তা নিম্নমুখী প্রবণতায় চলে আসে। বছরের তৃতীয় মাস মার্চে বাজার পুরোপুরি অস্থিরতায় লেনদেন হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ার দর গত এক মাস ধরে কমেছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। ২০১০ সালে ভয়াবহ ধসের পর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিওর মাধ্যমে মুনাফা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চলতি বছর শেয়ারবাজারে নতুন আসা সবগুলো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর শেয়ার দর কমেছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে শেয়ারবাজার তালিকাভুক্তির অনুমতি পেয়েছে ৬টি কোম্পানি। এর মধ্যে ইতিমধ্যে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে চারটি। তালিকাভুক্তির পর সবগুলোর শেয়ার নিয়েই বিভিন্ন সময় কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্তির পর বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে পরিচালকরা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ড্রাগন সোয়েটার তালিকাভুক্তির পর তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর হারিয়েছে ১০ টাকা। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা তিন মাসে তাদের বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেক খুইয়েছেন এই শেয়ারে। প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্তি সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করায় শোকজ করেছিল বিএসইসি। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত হওয়া একিম ল্যাবরেটরি নিজেদের বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শেয়ারবাজার থেকে। সম্প্রতি তালিকাভুক্ত হওয়া ইয়াকিন পলিমার জালিয়াতির অভিযোগে বিএসইসি দুবার কোম্পানির কর্মকর্তাদের জরিমানা করে। নিজেদের আর্থিক প্রতিবেদনে অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তাদের এই জরিমানা করা হয়। জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে যেসব কোম্পানি প্রাথমিক শেয়ার নিয়ে আসছে সেগুলো খুবই ছোট মূলধনী। কিছু কিছু জাঙ্ক শেয়ারও আপলোড হচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারে এমন প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এ বছর তালিকাভুক্ত হওয়া সব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে কারসাজির সুযোগ আছে। যাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, বড় কোম্পানি বিশেষ করে বিদেশি প্রতিষ্ঠান, টেলিকম খাত বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আনতে পারছে না। বাজেটে যদি কিছু কর সুবিধা দিয়ে এসব কোম্পানিকে আনা যেত তাহলে হয়তো পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াত। তিনি আরও বলেন, বাজেটে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ নিয়ে সুনির্দিষ্ট সুবিধা দেওয়া হলেও অনেকের আস্থা আসত। এ ছাড়া শেয়ার মুনাফার ওপর এক লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া উচিত। তাহলে আস্থা ফিরত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর