সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পূর্বাচল ৩০০ ফুট নিয়ে হচ্ছেটা কী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

এ বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরিকল্পনায় সংযুক্তি এনে বাড়ানো হয়েছে ‘কুড়িল-পূর্বাচল ১০০ ফুট চওড়া খাল ও উন্নয়ন প্রকল্প’-এর মেয়াদ ও ব্যয়ের বহর। রাস্তার দুই পাশে সার্ভিস রোড বাদ দিয়ে সংযুক্ত করা হচ্ছে তিনটি ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সড়ক, তিনটি ট্রাফিক ইন্টারসেকশনসহ বেশ কিছু বিষয়। রাস্তার লেন বাড়ানোর পরিকল্পনায় আবারও নেমে আসছে জমি অধিগ্রহণের খড়গ।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে কুড়িল থেকে বালু নদ পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খননের কাজ শুরু করা হয়েছে গত বছর ৯ জুলাই। আর কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছর আগস্ট মাসে। নান্দনিক এ প্রকল্পের নকশা তৈরি করেছে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। তাদের নকশা অনুযায়ী, খালের উভয় পাশে ২০ ফুট চওড়া একটি সার্ভিস রোড রয়েছে। এ ছাড়া বাধাহীনভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য তিনটি ইউলুপ, উভয় পাশে ১৫টি আর্চ ব্রিজ ও পাঁচটি ফুট ওভারব্রিজের ব্যবস্থা রেখে নকশা করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ এ নকশা পরিবর্তন করে সার্ভিস রোড না রেখে শুধু ফুটপাথের ব্যবস্থা রাখছে। এ ছাড়া আটটি লেনের এক্সপ্রেস রোড, তিনটি লেনের সার্ভিস রোড রাখা হয়েছে। ইউলুপের পরিবর্তে ব্যয়বহুল আন্ডারপাস (এট গ্রেড ট্রাফিক ইন্টারসেকশন) করার বিষয়টিও নতুন পরিকল্পনায়     অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কুড়িল থেকে বালু নদ পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারের মধ্যে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ে হলেও তা বালু নদ থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটারে সরু হয়ে ছয় লেনে নেমে আসছে। এ ছাড়া কুড়িল থেকে বালু নদ পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাত্র তিনটি ড্যাপের রাস্তা সংযুক্ত করা হচ্ছে। নতুন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও জমি অধিগ্রহণ করা হবে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আগের অধিগ্রহণকৃত জমির টাকাই এখনো পরিশোধিত হয়নি বলে জানা গেছে। ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, খাল খননের জন্য জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে মোট এক হাজার ৩০০ আবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৫০টি আবেদন বাতিল হয়ে গেছে। আর এক হাজার ২০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৫০টি পরিবারের ক্ষতিপূরণ বাবদ এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ৬০০টি আবেদনে মামলা এবং এলএকেস-১৩৮-এ জটিলতা থাকায় টাকা পরিশোধ করা যায়নি। আর বাকি ৫০টি পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেনি।’ এদিকে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, অনেকের কাছেই অধিগ্রহণ বাবদ বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তা ফেরত চাওয়া হয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। তারা বলেন, ‘জমি পরিমাপ তারা করেছেন। আইন অনুযায়ী যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ তারা দিয়েছেন আমরা তাই নিয়েছি। এখন যদি আবার বেশি দিয়েছেন বলে ফেরত চান, তাহলে আমরা কোথা থেকে দেব। বাড়ির জায়গা খালের অধিগ্রহণে পড়ে যাওয়ায় নতুন করে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সেখানে খরচ হয়ে গেছে ক্ষতিপূরণের টাকা। এখন ফেরত চেয়ে আমাদের আবার বিপদে ফেলা হচ্ছে।’ এদিকে আগের অধিগ্রহণের জটিলতা শেষ না হতেই আবারও অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন সংযোজিত পরিকল্পনায় রাস্তায় লেনসংখ্যা ও সংযোগ সড়ক বাড়ানোয় আবারও নেমে আসছে জমি অধিগ্রহণের খড়গ। এর ফলে এ বছর শেষ হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ২০২১ সালে। তবে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে কত অঙ্কে দাঁড়াচ্ছে তা এখনো জানাতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এদিকে বুয়েট প্রণীত পরিকল্পনায় থাকা উভয় পাশের সার্ভিস রোড বাদ দেওয়ার ফলে দুর্ভোগের আশঙ্কায় পড়েছেন ১০০ ফুট খালের দুই পাড়ের বসবাসকারী এবং যাতায়াতকারী মানুষ। খালের দুই পাশে ইতিমধ্যে বসবাস করছে কয়েক লাখ মানুষ। এ এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ অসংখ্য বসতবাড়ি। তাই পুনরায় জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে সার্ভিস রোড এবং সেতু বাদ দেওয়ায় দুর্ভোগের আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন এ এলাকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ড্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত করায় প্রকল্পটি ঝুলে যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর