শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে শেখের বেটির কল্যাণে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

‘মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে শেখের বেটির কল্যাণে

চট্টগ্রামের ‘জঙ্গল কালীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’-এর বাসিন্দাদের একই কথা, ‘আমাদের সবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে শেখের বেটির কল্যাণে।’ ১ হাজার ৬০টি পরিবার এখানে ঠাঁই পেয়েছে। বাঁশখালীর কালীপুর আদর্শ গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব মরিয়ম বেগম প্রধানমন্ত্রীর ১০ অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম ‘জঙ্গল কালীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’-এর অধীনে একটি ঘর পাওয়ায় অনেকটাই আবেগতাড়িত। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর বয়সে ঢাকা থেকে কীভাবে এই গ্রামে এসেছি জানি না। ৩০ বছর আগে হারাই স্বামী নজির আহমদকে। কোনো সন্তানও নেই। মানুষের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনোরকমে চলি। মাঝে মাঝে পাহাড়ে যাই কাঠ সংগ্রহে। আশার কথা, শেষ বয়সে এসে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই হয়েছে। এটিই আমার বড় পাওনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেখের বেটির জন্য আমার অনেক দোয়া। এ ছাড়া তো আর কিছু করার সুযোগ নেই আমার। সারা জীবন মা-বাবা, ভাই-বোনের কোনো খোঁজ পাইনি। কষ্ট ও পরিশ্রম থেকেও রেহাই পেলাম না। আসলো না আর্থিক সচ্ছলতা। এত না পাওয়ার মধ্যে জীবনে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই মিলেছে, এর চেয়ে পাওনা আর কী আছে?’ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ১০ অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে আশ্রয়ণ-২ সফলভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে আমরাও সন্তুষ্ট। এরই মধ্যে অনেক পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু ঘর হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় আছে। যাদের ঘর

বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের অনুভূতি অন্যরকম।’ জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে শতভাগ সরকারি অর্থায়নে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে তিন ফেইজে আশ্রয়ণ প্রকল্প (১৯৯৭-২০০২), আশ্রয়ণ প্রকল্প (ফেইজ-২) (২০০২-২০১০), আশ্রয়ণ ২ প্রকল্প (২০১০-২০১৭)। সারা দেশে এসব প্রকল্পে মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৭টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়। প্রকল্পের সাফল্য ও ধারাবাহিকতায় ২০১০-১৯ (সংশোধিত) মেয়াদে সারা দেশে ২ লাখ ৫০ হাজার গৃহহীন, ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় ৫০ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও দরিদ্রকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এরই মধ্যে ১০ উপজেলায় ২১২টি ব্যারাকে ১ হাজার ৬০ পরিবারকে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে তাদের মুখে দেখা দিয়েছে স্বস্তির হাসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সন্দ্বীপে বেলাল মোহাম্মদ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১৮টি ব্যারাকে ৯০টি পরিবার ও মোহাম্মদ শাহ বাঙালি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৫টি ব্যারাকে ৭৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থার জন্য ব্যারাক নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ফটিকছড়ির উত্তর বারমাসিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৭টি ব্যারাক নির্মাণ শেষে ১৩৫টি উপকারভোগী পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া পশ্চিম খুরুশিয়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ৪টি ব্যারাক নির্মাণ করা হচ্ছে।

এতে উপকারভোগী হিসেবে আবাসন সুবিধা পাবে ২০ পরিবার। আনন্দঘোনা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ১৪টি ব্যারাকে আবাসন সুবিধা পাবে ৭০টি পরিবার। সরফভাটা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ১০টি ব্যারাক পাবে ৫০টি উপকারভোগী পরিবার।

 জঙ্গলপোমরা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ১৪টি ব্যারাকে আবাসন সুবিধা পাবে ৭০টি পরিবার। জঙ্গল ঘাটচেকে ১০টি ব্যারাকে ৫০টি পরিবার আবাসন সুবিধা পাবে। রাউজানে রয়েছে ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর মধ্যে কদলপুর-১ প্রকল্পে ২৬টি ব্যারাকে ১৩০টি পরিবার ও পাহাড়তলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৬টি ব্যারাকে ৮০টি পরিবার আবাসন সুবিধা পাবে। রাউজানের কদলপুর-২ আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পটিয়া হাইদগাঁও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ৮টি ব্যারাকে ৪০টি পরিবার এরই মধ্যে বসবাস শুরু করেছে। বোয়ালখালী জ্যৈষ্ঠপুরা ফতেহারখীল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮টি ব্যারাকে ৪০টি পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারার বটতলী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ১০টি ব্যারাকে ৫০টি পরিবার বসবাস করছে। চন্দনাইশের হাশিমপুর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, শুরু হয়েছে আবাসন নির্মাণের কাজ। সাতকানিয়ায় মার্দাশা-২ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১০টি ব্যারাকে ৫০টি পরিবার ও দক্ষিণ রূপকানিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১০টি ব্যারাকে ৫০টি পরিবার বসবাস শুরু করেছে। এ ছাড়া বাঁশখালীর জঙ্গল কালীপুর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ১২টি ব্যারাকে ৬০টি পরিবার বসবাস শুরু করেছে। তা ছাড়া জঙ্গল কালীপুর ইজ্জতনগর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। সরেজমিনে জঙ্গল কালীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এ গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্প অনুযায়ী একটি ঘরে আছে রান্নাঘর, বারান্দা ও বড় একটি বেডরুম। সাজানো-গোছানো ঘর। বেডরুমের মাঝখানে পার্টিশন দিলে পৃথক দুটি রুম হবে। প্রতি ঘরই এক তলা পাকা। এ প্রকল্পের ৬০টি ঘরের মধ্যে ২০টি পাহাড়ের চূড়ায়। বাকিগুলো অপেক্ষাকৃত সমতলে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুতের লাইনও টানা হয়েছে। বাকি আছে কেবল সংযোগ।

সর্বশেষ খবর