বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ আদালত ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছিল বিশেষ আয়োজন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার অংশ হিসেবে গতকাল সকাল থেকেই নাজিমউদ্দিন রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সতর্ক অবস্থানে ছিল র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অতিমাত্রায় সতর্ক অবস্থানে ছিল র‌্যাব-পুলিশ। যে কোনো ধরনের নাশকতা রোধে ঢাকার প্রবেশদ্বার গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, কাঁচপুর ও ডেমরা ব্রিজ এলাকায় বসানো হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। মেটাল ডিটেক্টর এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে তল্লাশি করা হয় পথচারীদের। মাঝেমধ্যেই থামানো হয় যাত্রীবাহী গাড়ি। প্রবেশদ্বার ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বসানো হয়েছিল অতিরিক্ত চেকপোস্ট। সেখানে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এবং পথচারীদের থামিয়ে তল্লাশি করে পুলিশ। যদিও অন্য সব দিনের তুলনায় রাজধানীর সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। নিরাপত্তা আতঙ্কে রাজধানীর অনেক এলাকায় মানুষ দোকানপাটও খোলেনি। মামলার আসামিদের গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার এবং কাশিমপুর ১ ও ২ নম্বর কারাগার থেকে ঢাকায় আনার পথে আগে-পিছে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র‌্যাব, পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার কয়েক শ সদস্য সাদা পোশাকে দায়িত্বে ছিলেন। এ ব্যাপারে ছিল বাড়তি সতর্কতা।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে বিশেষ আদালত এলাকায় যান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কোনো নৈরাজ্য বরদাশত করা হবে না। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য যদি কেউ হুমকি হয়, কেউ যদি জনগণের মনে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টির সামান্যতম চেষ্টা করে, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ একাধিক সূত্র বলছে, আদালত শুরু হওয়ার আগেই ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এজলাসসহ আদালত চত্ব্বর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সোয়াপিং করে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয় সোয়াত, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পুলিশ ও র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড। গতকাল ভোর ৬টা থেকে আদালত ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোড়ে মোড়ে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ। তবে আগের রাত থেকেই আদালত-সংলগ্ন এলাকার সুউচ্চ ভবনগুলোতে অবস্থান নেয় পুলিশ। সার্বক্ষণিক প্রস্তুত ছিল অ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশের গাড়ি। সেই সঙ্গে প্রস্তুত ছিল রায়ট কার, এপিসি কারসহ জলকামানের গাড়ি।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, লালবাগ, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ও উত্তরাসহ রাজধানীর সব থানা এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশকে সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে রাজধানীর আটটি ক্রাইম জোনের উপকমিশনারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি এলাকায় দল বেঁধে লোকজনকে যাতায়াত করতে নিষেধ করা হয়। সেই সঙ্গে কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তার ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হয়েছে। রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশে, বিশেষ করে মামলায় সাজা পেতে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের নিজ এলাকায় নাশকতা ঠেকাতে তল্লাশি চালানো হয়। ওই সব এলাকায় বাড়ানো হয় টহল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। ১৪ বছর আগে সংঘটিত দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এ হামলায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান দলটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন দলটির কয়েক শ নেতা-কর্মী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর