সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চাকরির সন্ধানে এসে খুন, জানা গেল তিন বছর পর

বিশেষ প্রতিনিধি

চাকরির সন্ধানে ঢাকায় এসে তিন বছর আগে কদমতলীতে খুন হন রাসেল নামে এক যুবক। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই, ঢাকা মেট্রো উত্তর) দীর্ঘ তদন্ত শেষে এই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু (২৫) নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পিবিআই, ঢাকা মেট্রো উত্তরের পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ জানান, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাজধানীর কদমতলী এলাকায় রাসেল নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহতের মা রাশিলা বেগম এ ব্যাপারে কদমতলী থানায় মামলা করেন। থানা পুলিশ এই হত্যাকান্ডে কারা জড়িত তা উদঘাটন করতে না পারায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এর বিরুদ্ধে নিহতের মা আদালতে নারাজি আবেদন করলে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি পুনঃ তদন্ত করে। তিনি জানান, পাওনা টাকা চাওয়ার ঘটনায় মনোমালিন্যের জেরে রাসেলকে হত্যা করা হয়। পিবিআই জানায়, নিহত রাসেল (২২) গ্রামের বাড়িতে কৃষিকাজ করতেন। রাসেল মায়ের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় চাকরির সন্ধানে আসেন। পরের মাসে রাত ১১টার দিকে মা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংবাদ পান যে রাসেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে মারা গেছেন। তখন রাসেলের মা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে ডান পাঁজরে পিঠের দিকে ব্যান্ডেজ অবস্থায় ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। স্থানীয়ভাবে তিনি জানতে পারেন, কদমতলীর বরইতলা মোড়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি ছুরি দিয়ে রাসেলকে আঘাত করে। পরে তার ছেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কিন্তু কী কারণে এবং কারা তার ছেলেকে হত্যা করল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাননি তিনি। এ ঘটনায় রাসেলের মা রাশিলা বেগম (৪০) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা করেন। খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় আদালতের আদেশে পিবিআইর (ঢাকা উত্তর) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল-আমিন শেখ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে রাসেলের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা থানা এলাকাসহ ঢাকা মহানগরীর কদমতলী এলাকায় তদন্ত করেন। পরে মামলার নিয়োজিত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল শনিবার সকালে প্রধান আসামি সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রাসেল হত্যা মামলার রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে হত্যাকান্ডে জড়িত হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে শ্যামপুর থানার হাজীগেট ব্যাংক কলোনি থেকে আটক করা হয়। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়। আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, সজল নিহত রাসেলের একই গ্রামে বিয়ে করেন। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সজল ঢাকার কদমতলী এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। এ সময় রাসেলের সঙ্গে সজলের সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে রাসেলকে সজল টায়ারের ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। ঢাকায় আসার পর চাকরি দেওয়ার কথা বলেও চাকরি না দেওয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সজলের পরিচিত পিংকি ও পারভেজ কদমতলী এবং শ্যামপুর থানা এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে পারভেজকে পিংকি খুন করার জন্য বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু ও সজলকে ভাড়া করে। তারা পারভেজকে খুন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে একত্র হয়। সেখানে রাসেলকেও সজল কৌশলে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে সজল ও বাবু অন্যদের নিয়ে ইয়াবা সেবন শুরু করে। তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা সেবন শেষে সজল ও বাবু তাদের কোমরে থাকা চাকু দিয়ে পারভেজ ও রাসেলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর রক্তাক্ত পারভেজ ও রাসেলের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাসেল মারা যান।

সর্বশেষ খবর