মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
কাঞ্চন পৌর নির্বাচন বৃহস্পতিবার

এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বীরা শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

আর মাত্র এক দিন পর আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের প্রচার। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চলছে প্রার্থীদের গণসংযোগ, মিছিল আর উঠান বৈঠক। মেয়র-কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌর এলাকার অলিগলি। কে হচ্ছেন নতুন পৌর পিতা, তা নিয়ে চলছে ভোটারদের চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলের শক্ত ঐক্য আর দীর্ঘদিন নিরলস পরিশ্রমের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন ভোটারদের পছন্দের শীর্ষে। অন্যদিকে বিএনপি ঘরানার তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী দীর্ঘদিন জনবিচ্ছিন্ন থাকায় পড়েছেন শক্ত চ্যালেঞ্জে। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে আগামীর পৌরপিতা হিসেবে বিবেচনা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এবারের নির্বাচনে তার প্রতিই আস্থা রাখতে চাইছে কাঞ্চন পৌর এলাকার বেশির ভাগ ভোটার। জানা যায়, এ ধাপে সম্পূর্ণ ইভিএম পদ্ধতিতে শুধু কাঞ্চন পৌরসভায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কাঞ্চন পৌরসভায় মেয়র পদে চারজন, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৭ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম (নৌকা), বর্তমান মেয়র ও কাঞ্চন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা (নারিকেলগাছ), সাবেক মেয়র ও কাঞ্চন পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মজিবর রহমান ভূইয়া (জগ) ও নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম ইমন (মোবাইল ফোন) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ভোটাররা জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে বিগত পাঁচ বছর রফিকুল ইসলাম কাঞ্চন পৌরাঞ্চলের অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন। অন্যদিকে অন্য তিন প্রার্থীর কাউকেই মাঠে পাওয়া যায়নি। বর্তমান মেয়র দেওয়ান আবুল বাশার বিগত পাঁচ বছর ছিলেন ঘরকুনো। কালেভদ্রে বেরিয়েছেন ঘরের বাইরে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ দাফতরিক কাজেও তাকে খুঁজে পাইনি পৌর প্রশাসন। নিয়মিত মদ্যপানের কারণে ব্যাপক সমালোচিত দেওয়ান আবুল বাশারের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। গত পাঁচ বছরে পৌরসভার কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। এ ছাড়া পৌরসভায় চাকরির প্রলোভন দিয়ে ১২ তরুণ-তরুণীর কমপক্ষে ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চার বছর আগে প্রতিবন্ধী কার্ড পাওয়া সজল বিন আহমেদের মেয়ে সিনথিয়া এক টাকাও সরকারি অনুদান পায়নি। শারীরিক প্রতিবন্ধী এই কিশোরীর বাবার অভিযোগ, তার প্রতিবন্ধী মেয়ের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন মেয়র। গত নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর এলাকা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন আরেক সাবেক মেয়র ও কাঞ্চন পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মজিবর রহমান ভূইয়া। জনবিচ্ছিন্নতার কারণে তিনি রয়েছেন সবচেয়ে বেকায়দায়। আর বয়সে নবীন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম ইমন লড়াই করার যোগ্যতা থাকলেও নির্বাচনের কিছুদিন আগে তিনি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। স্বল্প পরিচিতি আর গণযোগাযোগের সংকটে তিনিও নেই মূল লড়াইয়ে। অন্যদিকে বিগত পাঁচ বছর পৌরবাসীর সব সময় পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও কাঞ্চন পৌর যুবলীগের সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলাম। পৌরসভার ৮৮টি মসজিদের উন্নয়ন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২০০টি সাবমারসিবল পানির পাম্প স্থাপন, ২৫০টি অসচ্ছল পরিবারকে ঘর নির্মাণ, ৫০০ লোকের কর্মসংস্থানসহ নিজস্ব অর্থায়নে শতাধিক যুবককে প্রবাসে পাঠিয়েছেন তিনি। পৌরসভার এক হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যয় ও এক হাজার নাগরিককে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা ব্যয় বহন করছেন নিয়মিত। দরিদ্রদের রিকশা ও সেলাইমেশিন প্রদান এবং পৌরাঞ্চলে ফ্রিতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালুসহ বিভিন্ন সহযোগিতা আর আন্তরিকতার কারণে রফিকুলকেই নতুন পৌর পিতা হিসেবে দেখতে চাইছে স্থানীয় বেশির ভাগ ভোটার। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা রফিকুল ইসলামকে সাধারণ মানুষ মেয়র হিসেবে পেতে কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। স্থানীয়রা জানায়, কাঞ্চন ইউনিয়ন পরিষদকে ২০০৩ সালে পৌরসভায় রূপান্তরিত করা হয়। সে হিসাবে এ পৌরসভায় যেটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল বিগত ১৭ বছরে তার সিকি ভাগও হয়নি। পৌরসভার জীর্ণদশা সব জায়গায় দৃশ্যমান। এ কারণে শক্ত চ্যালেঞ্জে পড়েছেন সাবেক মেয়ররা। স্থানীয়রা আরও জানায়, ৬৫ বছর ধরে ভূইয়া ও দেওয়ান পরিবারের পারিবারিক শাসনে বন্দী পৌরজনকের পদটি পরিবারতন্ত্র থেকে অবমুক্ত করতে ভোটাররা এবার আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিককে দল-মত-নির্বিশেষে প্রত্যাশা করছে। তাদের বিবেচনায় তিনি রয়েছেন সবচেয়ে এগিয়ে। এ ব্যাপারে কাঞ্চন পৌর বিএনপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে আমরা দুই পরিবারের কাছে জিম্মি ছিলাম। ভালো কোনো প্রার্থী পাইনি। সে কারণে দুটি পরিবারের লোকজন আমাদের এলাকায় ৬৫ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এ কারণে আমাদের এলাকার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখন আমাদের এলাকার মানুষ সচেতন হয়েছে। আমরা এলাকার উন্নয়ন চাই। এ বছর পৌরসভার উন্নয়নের জন্য আমরা রফিকুল ইসলামকে দল-মতের ঊর্ধ্বে মেয়র হিসেবে চাই। কারণ তার মধ্যে মানুষের সেবা, এলাকার উন্নয়ন করার মনোভাব রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর