শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

চলে গেলেন কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

চলে গেলেন কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান

সাহিত্যের ভুবনের অগণিত ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল আনুমানিক ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। এক বছর ধরে তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এ ছাড়া কিছু দিন ধরে তিনি কিডনি ও হার্টের সমস্যায়ও ভুগছিলেন। ঈদুল আজহার পরের দিন ১৩ আগস্ট শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর ১৫ আগস্ট নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। রিজিয়া রহমানের মৃত্যুতে পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বাদ আসর উত্তরার একটি স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন রিজিয়া রহমান। তার পৈতৃক নিবাস কলকাতার কাশিপুর থানার নওবাদ গ্রামে। বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সিদ্দিক ছিলেন একজন চিকিৎসক ও মা মরিয়াম বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা সপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন। প্রাথমিকে পড়া অবস্থায় কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। ওই বছরই সংবাদের সাহিত্য পাতায় ছাপা হয় তার কবিতা। ১৯৬৭ সালে ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতার সম্পাদক কামরুন নাহার লাইলির উৎসাহে তিনি ‘লাল টিলার আকাশ’ নামক গল্প লেখেন। পরে ‘ললনা’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে তিনি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে চলে যান। সেখানে কোয়েটা গভর্নমেন্ট কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে দুই বছর লেখাপড়া করেন। এরপর দেশে ফিরে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ১৯৬৫ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সাহিত্য পত্রিকা ‘ত্রিভুজ’-এর সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীতে জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কার্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিন বছর বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের সব অঙ্গনে তার ছিল সপ্রতিভ বিচরণ। রিজিয়া রহমানের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলো হলো- অগ্নিস্বাক্ষর, নির্বাচিত গল্প, চার দশকের গল্প, দূরে কোথাও। উপন্যাসগুলো হলো-  ঘর ভাঙা ঘর, উত্তর পুরুষ, রক্তের অক্ষর, বং থেকে বাংলা, অরণ্যের কাছে, অলিখিত উপাখ্যান, শিলায় শিলায় আগুন, ধবল জ্যোৎস্না, সূর্য সবুজ রক্ত, একাল চিরকাল, ঝড়ের মুখোমুখি, প্রেম আমার প্রেম প্রভৃতি। উপন্যাসে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকও অর্জন করেন।

সর্বশেষ খবর