শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিসফালাহ, সৌদি আরবের বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ

মোস্তফা কাজল, সৌদি আরব থেকে

মিসফালাহ সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর একটি এলাকার নাম। এলাকাটি সৌদি আরবে আগত বাংলাদেশিদের জন্য অতি পরিচিত একটি নাম। অনেকে মনে করেন সৌদি আরবের বুকে একখ- বাংলাদেশ হলো এই মিসফালাহ।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকা মসজিদুল হেরেমের অতি কাছে হওয়ায় বছরের ৩৬৫ দিন দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা হজ ও ওমরা যাত্রীদের জন্য জেগে থাকে এ মিসফালাহ এলাকাটি। মিসফালাহ এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে আবাসিক হোটেল রয়েছে ১০২টি। এসব হোটেলে থাকার সুব্যবস্থা আছে ২৫ হাজার লোকের। এর মধ্যে ৮৮টি হোটেল পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশিদের মাধ্যমে। এ ছাড়া এ এলাকায় দোকানসহ রেস্টুরেন্ট আছে ৪৬২টি। এর মধ্যে ৩৫৫টি বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশিদের মাধ্যমে। বছরের বেশির ভাগ সময় হজ ও ওমরা উপলক্ষে এ এলাকা বাংলাদেশিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

এ ছাড়া সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখানে বসবাস করেন। এলাকায় কসমেটিকস, জুয়েলারি, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য, রেডিমেড কাপড়ের দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানের কর্মচারীর মধ্যে একজন হলেও বাংলাদেশি খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রতি বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে পরদিন বাদ জুমা পর্যন্ত হাজার হাজার বাংলাদেশি মিসফালাহ এলাকায় ভিড় করেন। তখন মনে হয় এ যেন মরুর বুকে একখ- বাংলাদেশ। এমন কি বাংলাদেশ হজ মিশনের অফিসও এ এলাকায় অবস্থিত। আরও রয়েছে বাংলাদেশ হজ মিশন মেডিকেল সেন্টার ও ক্লিনিক। আর মিসফালাহর মধ্যে রয়েছে মসজিদুল হেরেম বা মক্কা শরিফ। সর্বোপরি এ এলাকায় ভিক্ষুকের দেখা মেলে যত্রতত্র। এ এলাকায় ছোট-বড় মসজিদ রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ২০টিতে বাংলাদেশি ইমাম বা মুয়াজ্জিন কর্মরত। বছরের বিশেষ দিনগুলোতে অনেক বাংলাদেশি পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এ এলাকায়। তাদের বিপুল উপস্থিতিতে পরিণত হয় মিলন মেলা। চলে বাংলাদেশি খাবারের আয়োজন। এ ছাড়া এলাকার হোটেলগুলোতে পাওয়া যায় বিরানি, কাচ্চি, খিচুড়ি, বাসমতি চালের ভাত, গরুর মাংস ভুনা, খাসির রেজালা ও মুরগির রোস্ট। এসবের পাশাপাশি বিকালে এসব হোটেলে পাওয়া যায় ছোলা মুড়ি, আলুপুরি, সিঙ্গারা, ঝালমুড়ি, নুডুলস, সমুচা, মিষ্টি ও বোরহানি। সৌদি প্রবাসী হাজী মোমিন মিয়া বলেন, প্রতি শুক্রবার আমি বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ নিতে ছুটে আসি এ এলাকায়। আমি পেটপুড়ে স্বাদ নিয়ে পরিতৃপ্ত হই। এ এলাকার এশিয়া হোটেলের মালিক হাজী মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সপ্তাহের এ দুই দিন আমার হোটেলের বেচাবিক্রি বেড়ে যায়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কয়েক হাজার বাংলাদেশি জুমার নামাজ ও ওমরা হজ করার জন্য সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন এখানে। তাদের খাবারের আয়োজন এ এলাকার হোটেলগুলো করে থাকে। আর এসব বাংলাদেশির কারণে মনে হয় আমরা বাংলাদেশে আছি। এলাকার প্রতিটি সড়কে হেঁটে চলাচল করলে শোনা যাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক ভাষায় কথাবার্তা। এসবের পাশাপাশি দেশের রাজনীতি তো রয়েছে। এ এলাকায় রয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কমিটি, আরও আছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কমিটি। এ এলাকার রাজনীতিকরা মাঝে-মধ্যে দেশের চলমান সমস্যা নিয়ে বাগ্যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পরে বাগ্যুদ্ধ থেকে হাতাহাতিতেও পরিণত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মিসফালাহ এলাকায় না এলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না। এ এলাকা আমার প্রাণ। এখানে এলেই মনে হয় আমি আওয়ামী লীগ অফিসে আছি।

সর্বশেষ খবর