বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ভোট নিয়ে তিন দল

বিদ্রোহীদের দুটি অপশন আওয়ামী লীগের

রফিকুল ইসলাম রনি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুরে শুরু হওয়া আলটিমেটাম শেষ হবে কাল বৃহস্পতিবার দুপুরে। বিদ্রোহীদের এই সময়ের মধ্যে সরে দাঁড়িয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন ও মেয়র পদে নৌকার প্রচারণায় যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় দলের পদ-পদবি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। অর্থাৎ বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সামনে দুটি অপশন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তা হলো, হয় দলীয় পদ রক্ষা, না হয় বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

গতকাল দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটির ১৪টি ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। ধানমন্ডি ৩/এ-তে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি, মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আকতারসহ বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আজ ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সমর্থিত নন, এমন বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে নিয়ে বসেছিলাম। আমরা তাদের কথা শুনেছি। তাদের সামনে দুটি অপশন দিয়েছি, একটি হলো, এখন থেকেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন এবং মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণায় নামতে হবে। দুই নম্বর হলো, নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে দলীয় সব পদবি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।’

দলীয় সূত্রমতে, আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী ঠেকাতে প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। তাতেও কাজে আসেনি। দুই সিটিতে এখনো কমপক্ষে ৪৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পঞ্চম দিনে গতকাল ঢাকা উত্তর সিটির ১৪ ওয়ার্ডের ১৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে ডেকে কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

বৈঠকসূত্র জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধ করেন। আগামীতে মহানগরী আওয়ামী লীগের কমিটিসহ বিভিন্ন পদ-পদবিতে মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। সবার কথাই মনোযোগ দিয়ে শোনেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। তাদেরকে প্রত্যাহার করতে বলেছি। দল করতে হলে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মানতে হবে। অন্যথায় আওয়ামী লীগে তার জন্য দরজা বন্ধ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছি।’

ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে বুঝিয়েছি, তারা এখন ছাড় দিলে দলের অপূর্ণাঙ্গ ঢাকা মহানগরী কমিটিসহ থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো পুনর্গঠনের সময় তাদের বিভিন্ন পদে পদায়ন ও ভবিষ্যতে অন্যভাবেও মূল্যায়ন করা হবে।’

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাই মূলত দলীয় সমর্থনবঞ্চিত হয়ে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থিতার আড়ালে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনেকেও। আবার বিদ্রোহী প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের কারণে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনী কাজ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম আশরাফ তালুকদারকে হত্যার হুমকি ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গত সোমবার শাহজাহানপুর থানায় ডিজি করেছেন ওই প্রার্থী।

সর্বশেষ খবর