মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রথম আলো সম্পাদকের চার সপ্তাহের জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থী নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট। এ সময় শেষে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। সেখানে তিনি জামিনের আবেদন করলে হাকিম আদালতকে তা বিবেচনা করতে বলেছে হাই কোর্ট।

আগাম জামিনের আবেদন করা অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি পাঁচজনের নাম যেহেতু মামলার এজাহারে ছিল না, সেহেতু তাদের জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়নি হাই কোর্ট। তার বদলে মামলার অভিযোগ আমল বা অভিযোগ গঠন না হওয়া পর্যন্ত তাদের হয়রানি বা গ্রেফতার না করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মতিউর রহমানসহ ছয়জনের জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেয়। যাদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই পাঁচজন হলেন- প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মহিতুল আলম, প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহ পরাণ তুষার ও নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক। জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও আইনজীবী সুমাইয়া আজিজ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। এর আগে ১৬ জানুয়ারি ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র নাঈমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অন্যতম বিচারক কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন। ১ নভেম্বর ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথম আলোর কিশোর সাময়িকী কিশোর আলো আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সেদিনই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই আবরারের বাবা ছেলের লাশ নিয়ে যান। পরে ৬ নভেম্বর ঢাকার আদালতে দন্ডবিধির ৩০৪(এ) ধারায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নাইমুল আবরারের বাবা।

প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানায় সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ : প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ।

গতকাল সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জামিন আদেশ দেওয়ায় মহামান্য উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে বলতে চাই, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুলছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুকে ঘিরে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক এবং প্রথম আলোর অপর চার কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও তাদের বাসায় পুলিশি তল্লাশির ঘটনায় সম্পাদক পরিষদ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

আমরা মনে করি, ন্যায়বিচারের স্বার্থে যার প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে, মতিউর রহমান এবং অন্যদের জন্য যেখানে সমন জারি করাই যথেষ্ট ছিল, সেখানে সে ঘটনায় তার ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা গণমাধ্যম তথা সংবাদকর্মীদের ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির চেষ্টা স্পষ্ট সংকেত বহন করে- বিশেষত প্রথম আলোর প্রথিতযশা সম্পাদক যখন দুর্ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। আমরা শঙ্কা ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, অস্বাভাবিক দ্রুততায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রভৃতিসহ মানহানির মামলার আইনগুলোর ক্রমবর্ধমান অপব্যবহার বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে একটি নিবর্তনমূলক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে এবং গণমাধ্যমকে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণের মুখে পড়তে হচ্ছে। এসব তৎপরতা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে নতুন নেতিবাচক মাত্রা যোগ করবে। আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি, এ অবস্থায় স্বাধীনভাবে সাংবিধানিক নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত ভূমিকা পালন করা গণমাধ্যমের জন্য উত্তরোত্তর কঠিন হয়ে পড়েছে।’ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা মতিউর রহমান এবং অন্য সবার আইনানুগ পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করছি। তাদের সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, একই সঙ্গে তারও নিশ্চয়তা দাবি করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর