পাথরসমৃদ্ধ সিলেটের সীমান্ত জনপদ কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট। এ চার উপজেলায় রয়েছে পাথরের সাতটি কোয়ারি। মাটির নিচে থাকা এ সম্পদ এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশের। অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে পাথরখেকোরা নির্বিচারে ধ্বংস করছেন পরিবেশ। কোয়ারি এলাকার নদী থেকে শুরু করে আবাদি ও জনবসতি ধ্বংস করে তারা উত্তোলন করছেন পাথর। অবৈধভাবে গভীর গর্ত করে ও বোমা মেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। একেকটি পাথর কোয়ারি যেন হয়ে উঠেছে একেকটি মৃত্যুগহ্বর। গত তিন বছরে সিলেটের সাত কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৬ শ্রমিক। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হলেও অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যান আসামিরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না এ ধ্বংসযজ্ঞ।
সিলেটের পাথর কোয়ারিতে সর্বশেষ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে সোমবার দুপুরে। ওইদিন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন কোয়ারিতে গর্ত করে পাথর উত্তোলনের সময় মাটি ধসের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পাথরখেকো আইয়ুব আলীর মালিকানাধীন গর্তে মাটিচাপা পড়ে মারা যান সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দৌলরা গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়া। গুরুতর আহত হন একই গ্রামের আরও তিন শ্রমিক। এর মাত্র চার দিন আগে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কোয়ারির কালাইরাগে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ‘বোমা মেশিনের’ বেল্ট ছিঁড়ে মারা যান আবদুস সালাম নামে এক শ্রমিক। সিলেটে যে সাতটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করা হয় তা হচ্ছে- কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন ও উৎমাছড়া; গোয়াইনঘাটের জাফলং ও বিছানাকান্দি; জৈন্তাপুরের শ্রীপুর ও কানাইঘাটের লোভাছড়া। এ কোয়ারিগুলোয় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবেশের জন্য ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বন্ধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের হিসাবমতে, ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন বছরে সিলেটের সাতটি কোয়ারিতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মারা গেছেন ৭৬ জন শ্রমিক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরফিনে। এ ছাড়া জাফলংয়ে ২১, ভোলাগঞ্জে ১৩, বিছানাকান্দিতে ৫, লোভাছড়ায় ৮ ও উৎমাছড়া কোয়ারিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন শ্রমিক।
বেলা সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘কোয়ারিগুলোয় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে শ্রমিক মৃত্যু থামানো যাবে না।’ এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আসলাম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাথর কোয়ারিগুলোয় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ নিয়ে সোমবার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কথা হয়েছে। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে নেপথ্যের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’