সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
জেলার রাজনীতি খুলনা

হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ, দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিগত দিনে রাজনীতিতে বড় খেসারত দিয়েছে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ। ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল’ গড়ে উঠলে এ বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। পাশাপাশি চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়লে সাংগঠনিক কর্মকান্ড হয়ে পড়ে টেবিল কেন্দ্রিক। তবে এ অবস্থা কাটিয়ে তৃণমূলে দলকে চাঙ্গা করতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, এরই মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের গ্রুপিং বা ব্যক্তিগত বলয় তৈরি করতে দেওয়া হবে না। বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে খুলনা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বলেন, বিগত দিনে জেলার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় অধিকাংশ উপজেলা কমিটি গঠন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে কোনো ধরনের গ্রুপিং বা ব্যক্তিগত রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। দলের চেইন অব কমান্ড ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সোহরাব আলী সানা বলেন, ‘দলকে শক্তিশালী করার বদলে ব্যক্তিগত ক্ষমতা বলয় তৈরি করতে গিয়ে সাংগঠনিক বিভেদ তৈরি হয়েছে। নেতা হতে গেলে বিশেষ বৈশিষ্ট্য লাগে। কলমের খোঁচায় নেতা হলে দল পরিচালনা করা যায় না।’ তিনি বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করতে না পারলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের পদ-পদবির বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত থাকলে নিজেদের তাগিদেই তারা কমিটি গঠন করবেন। এদিকে একেবারে বিপরীত সাংগঠনিক চিত্র জেলা বিএনপিতে। কমিটি গঠন নিয়ে বর্তমানে জেলার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শফিকুল আলম মনাকে সভাপতি ও আমীর এজাজ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বিরোধিতা করে ওই সময় বিএনপির একটি পক্ষ ভাঙচুর, দলীয় কার্যালয়ে তালা ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে। পরে ১৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন কমিটি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। সর্বশেষ জেলা বিএনপির একাংশ ও অঙ্গসংগঠনের যৌথসভায় বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে বর্তমানে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে পকেট কমিটি করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করা হলে আন্দোলনে রাজপথে না নেমে জেলার শীর্ষ দুই নেতা অসুস্থতার নাটক করে হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। এখন তারাই আবার সুবিধা নিয়ে পকেট কমিটি করার চেষ্টা করছেন। তবে এ অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে। স্বচ্ছ ও শক্তিশালী কমিটি গঠনে জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি করতে হবে। এতে জেলার নেতাদের ওপর তৃণমূলের আস্থা বাড়বে।

সর্বশেষ খবর