ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ‘বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স’ (বিএসএফ) ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) চোরাচালান দমনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিনিয়ত যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে সেগুলো হলো- গবাদি পশু, সোনা, মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ আর মানবপাচার।
ইদানীং সীমান্তে হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে পত্র-পত্রিকায় আন্তর্জাতিক সংসদ সংস্থার বরাতে যেসব তথ্য দেখা যায়, গরু চোরাচালানের বিষয়টিই গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের গরু চোরাচালানিরা ‘কাজ’ করে ৩২টি সীমান্তের জেলায়, এদের জাল বিছানো আছে ৫টি ভারতীয় সীমান্ত প্রদেশে। এই দুর্বৃত্তদের দমনে বিজিবি এবং বিএসএফ যত কঠোর হয়, ‘বিপক্ষ শক্তিকে ব্যর্থ করার মতলবে ততই ওরা নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাদের ব্যবহৃত কৌশলগুলোর মধ্যে দুটি কৌশল চমকপ্রদ। এর একটি হচ্ছে সুড়ঙ্গ তৈরি করা, অন্যটি কলাগাছের গুঁড়ি দিয়ে বানানো ভেলা।
পাচারপথ হিসেবে ব্যবহার্য গোপন সুড়ঙ্গের একটি প্রান্ত ভারতের করিমগঞ্জে আবিষ্কৃত হয়েছে। গভীর জঙ্গলের ভিতরে বিরাট বিরাট ড্রেন পাইপ দিয়ে বানানো এই সুড়ঙ্গে লুকিয়ে থাকা যায়। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়া জেলায় বর্ষা মৌসুমে নদীতে দুই কলাগাছের মাঝখানে গরু রেখে তাদের মাথা দড়িতে বেঁধে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে গরুগুলোকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ওপারে বাংলাদেশে। বিএসএফ হানা দিতে পারে আশঙ্কায় গরুর গলায় ইম্পোবাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) যুক্ত করার ঘটনা সম্প্রতি ধরা পড়েছে হারুডাঙ্গা সীমান্ত ফাঁড়ির কাছে। আইইডি বিস্ফোরিত হলে সীমান্তরক্ষী মারা যাবে, সঙ্গে সঙ্গে মরবে সংশ্লিষ্ট গরুটিও।পাচার করতে গেলে বিজিবি বা বিএসএফের হাতে মারা যেতে পারে, ‘রাখাল’রা (মাঠ পর্যায়ের পাচারকারী) এটা জানে। প্রশ্ন করা যায়, তবু কেন জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে তারা? ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ৪০৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমঙ্গের সঙ্গেই রয়েছে ২২১৬ কিলোমিটার। এখানে ভারতের ১৪৯টি নাজুক গ্রামে রয়েছে ৬৮টি পাচারপথ। এই পথে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের গরু যায় বাংলাদেশের বাজারে। ঈদুল আজহার প্রাক্কালে গরুর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ওই সময় ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় ভারত থেকে কেনা কচি গরু বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হয় ৪০ হাজার টাকায়। ভারতে ৪৫ হাজাার টাকায় কেনা সুঠামদেহী গরু বাংলাদেশে বিক্রি হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায়। মুনাফার এই সুবর্ণ সুযোগ পাচারকারীদের জীবনের ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করছে। পাচার রোধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরাই তৎপর। তবে ভারতীয়রা দুঃখের সঙ্গে অভিযোগ করেন যে, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি রাখালের প্রাণ যাওয়ার ঘটনাকে ফলাও করে প্রচার করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। পাচারকালে সশস্ত্র হামলায় বিএসএফের অনেক সদস্য প্রতি বছর হতাহত হন, তা এই সংস্থাগুলোর নজরে পড়ে না। পড়লে তারা দেখতেন, কেবলমাত্র আত্মরক্ষার্থে গুলি করে থাকে বিএসএফ।