বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
নদীর কান্না

অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কালীগঙ্গা

মো. কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ

অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কালীগঙ্গা

মানিকগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের প্রমত্তা কালীগঙ্গা নদী দখলে-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। উজানের পলিতে এবং দখল আর দূষণে নদীটি তার যৌবন হারিয়েছে অনেক আগেই। যেটুকু বাকি আছে সেটুকুও হারাতে বসেছে দখলদারদের কারণে। নদীর উত্তর পাশ ভরাট করার কারণে দক্ষিণ পাশে প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। দক্ষিণ পাড় ভাঙনের কারণে এ নদীর ওপর নির্মিত বৃহৎ দুটি সেতু- কালীগঙ্গা সেতু  ও বেউথা সেতু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

নদীবেষ্টিত মানিকগঞ্জ। এ জেলার চতুর্দিকেই নদী। ১ হাজার ৩৭৯ বর্গ কিলোমিটারের মানিকগঞ্জের নদীর আয়তন ২৪১ কিলোমিটার। নদীপথকে কেন্দ্র করেই বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তীরবর্তী এলাকায়। মানিকগঞ্জের মধ্য দিয়ে যতগুলো নদী প্রবাহিত, এর মধ্যে কালীগঙ্গা অন্যতম। ঢাকার  বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হওয়ার কারণেই এ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জানা যায়, জামসা, ঘোস্তা, বালিরটেক, বেউথা, ত্বরাঘাট, যাবরাসহ বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ নদীবন্দর গড়ে ওঠে এই কালীগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে। এই নদীটি ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী থেকে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনার সঙ্গে সংযোগ ছিল। এসব এলাকা থেকে বড় বড় স্টিমার, লঞ্চ, নৌকা দেশ-বিদেশে চলাচল করত। এখন এসব কেবলই স্মৃতি। কালের বিবর্তনে মানিকগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবহমান নদীটি এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া এ নদীটি থাকে পানিশূন্য। নদীর বুকজুড়ে ধু-ধু বালুচর, কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো কিংবা দুরন্তদের খেলাধুলার দৃশ্য চোখে পড়ে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দখলে-দূষণে মানিকগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কালীগঙ্গা নদীটি বিলীন হয়ে যাবে। দক্ষিণ ত্বরায় অবস্থিত রমজান আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, নদীর উত্তর পাড়ে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে নদী দখল করে ভরাট করেছেন। অনেকে বিভিন্ন ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। এতে নদীর প্রায় অর্ধেক ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে নদীর দক্ষিণ পাড়ে প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। ইতিমধ্যে যাবরা থেকে বেউথা পর্যন্ত অনেক বাড়িঘর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, এই কালীগঙ্গা নদীতে নির্মিত বেউথা ও ত্বরাঘাট সেতুর উত্তর পাশে মাটি ভরাট করার কারণে বর্ষার সময় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে নদীর দক্ষিণ পাশে পানির প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়ে ভাঙন দেখা দেয়। এ জন্য ত্বরা সেতু, বেউথা সেতু, রমজান আলী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়সহ বহু প্রতিষ্ঠান ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যত্রতত্র অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণেও পাড় ভেঙে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, নদীর ওপর নির্মিত সেতুর কাছে বালুমহাল হওয়ায় ত্বরা ও বেউথা দুটি সেতুই ঝুঁকিতে রয়েছে। অবৈধ দখল আর উজানের পলিতে নদীটি মরে যাচ্ছে। এর ফলে কৃষিকাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আগে নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষিতে সেচ দেওয়া হতো। এখন ভূগর্ভস্থ পানিই একমাত্র ভরসা। নদী বাঁচাও আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, অতি মুনাফালোভী অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীরা নিয়মনীতি না মেনে বালু উত্তোলন করার কারণেই নদীতে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ত্বরা এলাকার  বালু ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান সম্রাট বলেন, ড্রেজার, ভেকুতে মাটি কাটায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দক্ষিণ পাড়ে ভাঙন হচ্ছে অন্য কারণে। মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মাইন উদ্দিন বলেন, ‘বেউথা ও ত্বরা এ দুটি এলাকা বালুমহাল রয়েছে। এগুলো জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে। বালু উত্তোলনের কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, বালু ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন করছেন কি না এগুলো সরেজমিনে গিয়ে দেখে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করব।’

সর্বশেষ খবর