পৃথিবীতে সবচেয়ে লম্বা সাপ কোনটি? এ প্রশ্ন আমার মতো হয়তো পাঠক মহলের মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে। এত দিন ধরে অ্যানাকোন্ডাকেই আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সাপ বলে জেনে এসেছি। এরা সাধারণত ১৮ থেকে ২৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে গবেষকরা বলছেন, এটা ভুল ধারণা, পৃথিবীতে সবচেয়ে লম্বা সাপ ‘গোলবাহার অজগর’। আর তার চেয়েও আশ্চর্যের হলো, এ সাপটি আমাদেরই দেশের। তবে বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এদের দেখা যায়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৩৮ ফুট লম্বা গোলবাহারের দেখা মিলেছে। এদের ইংরেজি নাম Reticulated Python. আর বৈজ্ঞানিক নাম Python reticulatus. সম্প্রতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফের ক্যামেরায় একটি গোলবাহার অজগর ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। আইইউসিএনের তালিকায় এরা মহাবিপন্ন প্রাণী। বিশারদরা জানান, আমাদের দেশে তিন প্রজাতির অজগর পাওয়া যায়। রেটিকুলেটেড পাইথন, বার্মিজ পাইথন ও রক পাইথন। এর মধ্যে রেটিকুলেটেড পাইথন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সাপ। আমাদের দেশে এরা গোলবাহার অজগর নামে পরিচিত। পাইথন পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো এরাও নির্বিষ সাপ। গোলবাহার দেখতে খুব সুন্দর। শরীরের রং বিচিত্র। হলুদ, সাদা, সবুজ, ধূসর, কালো এমন অনেক রংই এদের শরীরে দেখা যায়। শরীরের মাঝে রিংয়ের ভিতর ডায়মন্ডের মতো বেশ কিছু ছোপ রয়েছে। আর মাঝের রং ধূসর। আর এই বড় ছোপগুলোর আশপাশে কালচে ছোট অনেক দাগ ও ফোঁটা রয়েছে। এরা শিকারের সময় এক জায়গায় চুপচাপ বসে থাকে। শিকারকে আক্রমণ করার পর পেঁচিয়ে নেয়, যেন শ্বাস নিতে না পারে।
নিস্তেজ হয়ে পড়লে ধীরে ধীরে গিলে ফেলে। এরা প্রধানত ইঁদুর, বানর, হরিণ, বুনো শূকর খায়। এ ছাড়া বিভিন্ন পাখি ও সরীসৃপও এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন এদের প্রজননের সময়। এ সময় স্ত্রী গোলবাহার ৮০ থেকে ১২০টি ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার জন্য এরা গর্ত বা কোটরির মতো জায়গা বেছে নেয়। কুন্ডলী পাকিয়ে একটানা ৮০ থেকে ১০০ দিন ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটার দুই দিন আগে গোলবাহার চলে যায়। ছানারা একাই নাক দ্বারা ঠেস দিয়ে ডিম ফাটিয়ে বাইরে বের হয়। আদনান আজাদ আসিফ বলেন, ‘রেটিকুলেটেড পাইথন হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের সাপ। আমাদের দেশে শুধু চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে এরা টিকে আছে। এ ছাড়া দেশের আর কোথাও নেই। তবে দিনে দিনে এরা সংখ্যায় কমছে। এর কারণ হলো, পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতিরা এদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলে। তা ছাড়া বনাঞ্চল কেটে কৃষিজমি ও জুম চাষের জন্য যখন বনে আগুন দেওয়া হয় তখন সাপ মারা যায়। উপজাতিরা বনাঞ্চলে অন্যান্য প্রাণী শিকার করে খেয়ে ফেলে, তখন সাপগুলো খাদ্য সংকটে পড়ে লোকালয়ে চলে আসে এবং মানুষের রোষানলে পড়ে প্রাণ হারায়।’