রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, করোনা মহামারী আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। এর কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০’ এর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে ভিডিও রেকর্ডকৃত ভাষণে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে যে দূরদর্শী অঙ্গীকার করেছিল তারই সুফল আজ মানুষ ঘরে বসে পাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনাবেচা করা, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম, টেলিমেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা এ কঠিন সময়ে জীবনযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। অফিস-আদালতে চালুকৃত ই-নথি ব্যবস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে। এতে সরকারি সেবা কার্যক্রম চালু রাখা এবং নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছানো সহজ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘করোনা ট্রেসার বিডি’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া গুজব ও অসত্য তথ্য রোধে দেশব্যাপী ‘সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী।রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে সামনে নতুন এক শিল্পবিপ্লবের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে প্রধান অংশীদার দেশের তরুণরা। প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ৫ লাখ ৮৫ হাজার জনকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের এ সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি তারা নিজেরাও যাতে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে পারে সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ যুগে হাইটেক শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার সারা দেশে ৩৯টি হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করছে। এগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ খাতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবটিক্স, সাইবার সিকিউরিটির উচ্চ প্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর প্রজন্ম বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা এখন আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছরে আইটি খাতের রপ্তানি ২৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবা খাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রোডম্যাপ ঘোষণার ১০ বছর পর সরকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর, সুশাসন ও তারুণ্যের শক্তি’ এই তিনটি বাতিঘর কেন্দ্রিক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়।
এতে ডিজিটাল বিপ্লবের বাস্তবায়ন আরও গতিশীল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়ন ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিতকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসিও)-এর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের ব্র্যান্ড ইভেন্ট ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ পাবলিক ও প্রাইভেট পার্টনারশিপ এই ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ ২০২০-এর আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপিসহ রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
মানবাধিকার দিবসে রাষ্ট্রপতির বাণী : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রতিকার পাওয়ার পথ সুগম করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। আজ ১০ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘মানবাধিকার দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এবারের মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ঘুরে দাঁড়াব আবার, সবার জন্য মানবাধিকার’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।