শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সদস্যদের পারস্পরিক অসহযোগিতায় বেকায়দায় পড়েছে জাতিসংঘ

-হুমায়ূন কবির

সদস্যদের পারস্পরিক অসহযোগিতায় বেকায়দায় পড়েছে জাতিসংঘ

বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাংক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবিরের মতে, শক্তিশালী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে জাতিসংঘ। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সংকট সমাধানে জাতিসংঘ তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা হুমায়ূন কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও সম্মানজনকভাবে ফেরত পাঠিয়ে একটা টেকসই সমাধানের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের পুরোপুরি সমর্থন আছে। বাংলাদেশের এই বক্তব্য ও অবস্থানের পক্ষে আন্তর্জাতিক বিশ্ব বলিষ্ঠভাবেই পাশে আছে। তবে তাদের কিছু কিছু বিষয়ে চিন্তা আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্ব কথা বলছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, শান্তিপূর্ণভাবে সম্মানের সঙ্গে স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তারা পুরোপুরিই একমত। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমারের জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর উপস্থিতি আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে জাতিসংঘের আরও বেশি সক্রিয় ও কার্যকর হওয়া প্রয়োজন।

রোহিঙ্গার ইস্যুর সমাধানের জন্য জাতিসংঘ চেষ্টা করছে মন্তব্য করে হুমায়ূন কবির বলেন, আসলে জাতিসংঘের দুইটা চেহারা। একটা হলো ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতিসংঘ’। আরেকটা হলো ‘সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘ’। তিনি বলেন, আমরা সব দেশ জাতিসংঘের সদস্য। এই সদস্য রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘকে যে ধরনের সহযোগিতা করে জাতিসংঘ সেরকম ভাবেই কাজ করতে পারে। জাতিসংঘ যখন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন ধারণা করা হয়েছিল, বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো বৃহত্তর স্বার্থে একে অপরকে সহযোগিতা করে বিশ্ব শান্তি বজায় রাখবে। এখন শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো একে অপরকে সহযোগিতা না করলে ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতিসংঘ’ খুব অসহায় হয়ে পড়ে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতিসংঘ’ বেকায়দায় পড়ে গেছে। কারণ শক্তিশালী সদস্যরা একে অপরকে সহযোগিতা করছে না। ফলে সেভাবে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটির অন্য চেহারাটা হলো ‘সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘ’। এই ‘সংস্থা জাতিসংঘ’ কিন্তু যথেষ্ট তৎপর। ইউএনএইচসিআর, আইওএমসহ বিভিন্ন জাতিসংঘ সংস্থা একেবারেই মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের সংস্থাগুলো কাজ করছে। ফলে এটা স্পষ্ট যে, ‘সংস্থা জাতিসংঘ’ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশের পাশে আছে। কিন্তু ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতিসংঘ’ এর অবস্থান বা চেহারা এখনো ষ্পষ্ট নয়। কারণ সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অপরকে সহযোগিতা করছে না। ফলে জাতিসংঘের কাছে আমরা যে ধরনের সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছিলাম, তা এখনো পাইনি। তাই রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও টেকসই সমাধানও হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর