শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সাঁওতালদের ঘরে আনন্দ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বড়দিনের আনন্দ নেই সাঁওতালদের ঘরে। আজ বড়দিন। গতকালও এই সম্প্রদায়ের লোকজন কাজে গেছেন। অন্যবার সপ্তাহজুড়ে চলত উৎসবের প্রস্তুতি। এবার হাতের অবস্থা খারাপ। মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘসময় কর্মহীন থাকতে হয়েছে এই সম্প্রদায়ের লোকদের।

রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়াহাটে গতকাল সকালে দেখা গেল- সারি সারি দাঁড়িয়ে ভটভটি টেম্পো। তার ওপর উঠেছেন ১৫-২০ নারী-পুরুষ। বেশির ভাগই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ। ধর্ম খ্রিস্ট। গন্তব্য রাজশাহী শহর। উদ্দেশ্য কাজের সন্ধান। টেম্পোতে দাঁড়িয়ে ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের বাসিন্দা মতি মার্ডি। তিনি বললেন, করোনার কারণে এই বছরের বেশিরভাগ সময়ই তো কাজ ছিল না। ক’দিন আগে একটা সাইটে কাজ পেয়েছি। কাল (আজ) বড়দিন। তাও কাজে যাচ্ছি। অভিনাথ মার্ডি নামে আরেকজন বললেন, কাজ করলেও ঠিকমতো টাকা পাওয়া যায় না। তাই এবার আমাদের উৎসব নেই। গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে রাস্তাঘাট মেরামত করেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ১০ নারী। গতকাল তারা ঈশ্বরীপুর এলাকায় কাজ করছিলেন। কথা বলে জানা গেল, পাঁচ মাস ধরে তারা কাজ করেন। প্রতিমাসে মজুরি সাড়ে ৪ হাজার টাকা। প্রথম ২ মাসের টাকা তারা একসঙ্গে পেয়েছেন। এরপর তিন মাস পেরিয়েছে। মজুরি পাননি। তারা ছেলে-মেয়েদের নতুন পোশাক দিতে পারেননি। কাতারিনা টুডু নামে এক নারী বললেন, স্বামী মারা গেছে ১০ বছর। কাজ-কাম করে তিন সন্তানকে বড় করছি। কিন্তু তিন মাসের মজুরি পাইনি।’ পঞ্চাশোর্ধ বিটিয়া হাসদার স্বামী ভোলানাথ টুডু মারা গেছেন একমাস আগে। তিনি জানালেন, কাজ করলেও টাকা পাইনি। উৎসব করব কী দিয়ে?’ দীপালি বাহার নামে আরেক নারী বললেন, ‘এই কাজে না লাগলে ধানটান কাটতে পারতাম। কিন্তু তা তো পারিনি। কেউ খোঁজ নিল না।’ একই রকমের কথা বললেন জোসতিনা সরেন, শান্তি বিশ্বাস, সন্ধ্যা রানীসহ অন্যরা। উপরে টিন। মাটির দেয়াল। এটি গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়া ক্যাথলিক গির্জা। গতকাল কাগজের ফুল দিয়ে গির্জাটি সাজানো হচ্ছিল। পাশেই সামিয়ানা টানিয়ে করা হচ্ছিল প্যান্ডেল। সেখানে পোল বিশ্বাস জানালেন, তাদের গ্রামে প্রায় ৬০টি সাঁওতাল পরিবার। প্রতিবার মাথাপিছু ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলে তারা অনুষ্ঠান করেন। এবার করোনার কারণে চাঁদার পরিমাণ ৫০ টাকা করেছেন। জুগিডাইং গ্রামের দিনমজুর বিরেন সরেন বলেন, করোনার কারণে তারা অনেকদিন শহরে কাজ পাননি। ধার-দেনা করে সংসার চালিয়েছেন। কয়দিন আগে ধান কাটার কাজ শেষ হয়েছে। মজুরি হিসেবে যে ধান পেয়েছিলেন তা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছেন। নবাই বটতলা গির্জার ব্রাদার শিমন মারান্ডি জানালেন, বড়দিনের সকালে প্রার্থনা শেষে তারা গ্রামের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচে-গেয়ে সে পরিবারের মঙ্গল কামনা করে আসেন। এটি তাদের অনেক আনন্দ দেয়। করোনার কারণে এবার সেই অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে গির্জায় প্রার্থনা হবে।

সর্বশেষ খবর