বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পিছিয়েছে জাতীয় জিন ব্যাংকের কার্যক্রম

এ বছর শুরুর কথা থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা

জিন্নাতুন নূূর

পিছিয়েছে জাতীয় জিন ব্যাংকের কার্যক্রম

নরওয়ের একটি জিন ব্যাংক যা ‘সিড ভল্ট’ নামে পরিচিত, সে স্থানে বাংলাদেশের হাজার হাজার প্রজাতির ধানের বীজ সংরক্ষিত আছে। এই বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছরই বাংলাদেশ সরকার সিড ভল্ট কর্তৃপক্ষকে অর্থ দেয়। বেশ কয়েক বছর আগে নরওয়ে সফরে গিয়ে এ কথা জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন, বাইরের দেশে জিন ব্যাংকে দেশীয় বীজ রাখার জন্য আর অর্থ না দিয়ে নিজ  দেশেই একটি জিন ব্যাংক স্থাপন করবেন। সে থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশে জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপনের কার্যক্রম। তবে উদ্যোগ গ্রহণের পর ২০২১ সালে জাতীয় জিন ব্যাংক নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর এর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর কারণে গত ছয়-সাত মাস জিন ব্যাংক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ফলে জিন ব্যাংকের সুফল পেতে দেশীয় গবেষকসহ সংশ্লিষ্টদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপনের অবকাঠামো কাজ চলছে। এ ছাড়া এ-সংশ্লিষ্ট একটি নীতিমালাও তৈরি করা হচ্ছে। এই নীতিমালা পাস হলে অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একটি কপি জাতীয় জিন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে পাঠাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় অন্যদের জিন ব্যাংকে রাখা উপাদানগুলো নষ্ট হয়, তাহলে জাতীয় জিন ব্যাংকে রাখা উপাদান নিয়েও অন্যরা গবেষণা কাজ চালাতে পারবেন। এরই মধ্যে জিন ব্যাংক সংরক্ষণের জন্য মূল ভবনের অবকাঠামোগত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১২ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি ও গণপূর্ত অধিদফতর (এনআইবি) সাভারের গণকবাড়িতে ‘জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় একটি মূল জিন ব্যাংক গঠন করা হবে। সেখানে জীববৈচিত্র্যের জিন রহস্য সংরক্ষিত থাকবে। এগুলো সংরক্ষণে স্টোরেজ সুবিধা গঠন করা হবে। পাশেই তৈরি করা হবে ল্যাবরেটরি। এর বাইরে আরও থাকবে সার্ভার সিস্টেম। কম্পিউটারাইজড এই সার্ভারে পুরো জিন ব্যাংকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সাভারে ঢাকা ইপিজেডের পাশে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাশেই জাতীয় জিন ব্যাংকের অবকাঠামোগত কাজ চলছে। এ জন্য যে ভবন তৈরি করা হচ্ছে সেটি প্রায় ৪০ লাখ নমুনা ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। প্রকল্প এলাকায় বেজমেন্টের ১২ তলাবিশিষ্ট ল্যাবরেটরি, অফিস, জিন ব্যাংক ভবন, গবেষণাগারসহ অন্যান্য স্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, অ্যানিমল সেড, ননসিড প্ল্যান্ট সেড ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে ১২ তলাবিশিষ্ট এই ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় জিন ব্যাংক পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সিনিয়র কনসালট্যান্টও নিয়োগ করা হয়েছে। সাধারণত যেখানে এক বা একাধিক জাতের (গাছের বীজ, পোলেন, কীটপতঙ্গ, প্রাণীর সিমেন, অণুজীব বা গাছের কোটিং) জেনেটিক উপাদান ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য স্বল্প/দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণ হয় তাকে জিন ব্যাংক বলা হয়। জিন ব্যাংক স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৈরি করা যেতে পারে। বাংলাদেশে উদ্ভিদ, প্রাণী, মৎস্য, অণুজীব, কীটপতঙ্গ, অমেরুদন্ডী প্রাণী, বনজ ইত্যাদি জেনেটিক রিসোর্স-সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য আছে। এর মধ্যে একবার কোনো প্রজাতি হারিয়ে বা বিলুপ্ত হয়ে গেলে এর অস্তিত্ব চিরতরে হারিয়ে যাবে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যক্তিপর্যায়ে জিন ব্যাংক গড়ে তোলা হয়েছে। তবে এসব জিন ব্যাংকে সংরক্ষিত জেনেটিক উপাদানের কোনো ব্যাকআপ নেই। কোনো কারণে সংরক্ষিত এই সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলে তা পুনরায় সংগ্রহ করা দুরূহ হবে।

জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. মো. আবদুল আলীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জিন ব্যাংকে যে উপাদান সংরক্ষণ করা হবে তার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশে আসতে ছয়-সাত মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় এসব যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আবার এই টেন্ডার বাছাই করে তা প্রক্রিয়াধীন করতে আরও বছরখানেক সময় লেগে যেতে পারে। তিনি জানান, জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপনে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেন। এরপর ২০১৯ সালে প্রকল্পটির জন্য অর্থ ছাড় দেওয়ার পর এর কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের শুরুতে জিন ব্যাংক পরিচালনার জন্য ২৫৪ সংখ্যক জনবলের একটি চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও প্রকল্পকালীন সময় একনেক থেকে এই সময়ে কোনো জনবল নিয়োগ না দেওয়ার কথা জানানো হয়। বলা হয় এনআইডি থেকে পদ সৃষ্টি করতে হবে। তবে আউটসোর্সিংয়ের কিছু জনবল দেওয়া হয়েছে। এনআইডিতে পরে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জনবল নিয়োগের জন্য প্রস্তাব দেন। এরপর গবেষক ও গবেষণা সহকারী মিলিয়ে মোট ৫৮ জনবল নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাবটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে।

 

সর্বশেষ খবর