মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় বাধাগ্রস্ত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি

সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদারের পরিকল্পনা

মানিক মুনতাসির

আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করোনায় স্থবির হয়ে পড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি আবারও চাঙা হয়ে উঠবে বলে মনে করে সরকার। অর্থ বিভাগ সূত্র জানান, আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র্য বিমোচনবান্ধব

অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। এরপর টানা দুই মেয়াদে একই মতাদর্শের সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বেশ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থায়ও ব্যাপক পরিবর্তন আসছিল। কিন্তু ২০২০ সালের শুরুতে করোনা সংক্রমণ বাড়লে এ কার্যক্রম অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ ছিল মানুষের কাজের সুযোগ কমে আসা। সূত্রমতে, বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের আঘাতে মানুষের আয় কমে গেছে। এখনো স্বাভাবিক হয়নি ব্যবসা-বাণিজ্য। বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা সংস্থার তথ্যমতে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২০ থেকে ৪২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আবার অনেক মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম খেয়ে কোনোমতে জীবন ধারণ করছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। তাদের ফেরানোর মতো কোনো কর্মসূচি এখনো চোখে পড়েনি। আবার যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছে তাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এমনকি তাদের দেশেও কর্মসংস্থানের মতো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যদিও সরকার এর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার কারণে দারিদ্র্য বাড়ছে। শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একই পরিস্থিতি। করোনার আগে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ বেশ ভালো করছিল কিন্তু করোনার ধাক্কায় সে অবস্থা আর নেই। এখন মানুষের আয় কমে গেছে। বহু মানুষ নতুন করে বেকার হচ্ছে। আগের বেকার সমস্যা তো রয়েছেই। ফলে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ধাক্কায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে দারিদ্র্য। কমছে মানুষের আয়, বাড়ছে দৈনন্দিন ব্যয়। ফলে সঞ্চয় ভাঙিয়েও চলতে পারছে না মানুষ। নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত গচ্ছিত সম্পদ বিক্রি করছে। আর এ জনগোষ্ঠীর একটি অংশ জীবন ধারণের জন্য প্রতিনিয়ত ধারদেনা করছে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার জরিপ বলছে, করোনার কারণে বেশির ভাগই মানুষেরই আয় কমেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে মানুষ। আর ধনী ও বণিক শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে যৎসামান্যই। ফলে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্যও বাড়ছে দ্রুত।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা স্যানেমের তথ্যমতে করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশে উঠেছে। আর ব্র্র্যাক ও পিপিআরসি বলছে, গত জুলাই শেষে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; যা ২০০৯ সালে ছিল ২০ শতাংশ আর ২০১৬ সালে ২৪ শতাংশ। গত চার বছরে দারিদ্র্য কমেছিল ৪ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বর-জুলাই সাত মাসে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এ হার আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্র্যাক ও পিপিআরসি। অন্যদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির তথ্যমতে দারিদ্র্যের হার এখন ৩৫ শতাংশ; যা ডিসেম্বর, ২০১৯-এ ছিল ২০ শতাংশ।

এ বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে। অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করছে। সরকারের উচিত নতুন করে একটি জরিপ করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে সহায়তা দেওয়া। অন্যথায় দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।’ এদিকে বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনা-পরবর্তী দেশের অন্তত ৩ দশমিক ৮ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। আগে থেকেই দরিদ্র মানুষ রয়েছে প্রায় ৪ কোটি। বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ দেশকে ঋণ দিয়েছে। পাশাপাশি অর্থ সাহায্য করেছে। এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে বলে দাবি করেছেন তারা। শুধু তাই নয়, করোনার কারণে বিশ্বে খাদ্যসংকটও দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস।

সর্বশেষ খবর