মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মিয়ানমারে গুলিতে নিহত আরও ৪০, চীনা কারখানায় আগুন

প্রতিদিন ডেস্ক

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন জনতার বিক্ষোভে গুলি চলছে এবং হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

জানা গেছে, গত রবিবার রাজধানী ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়া ও সুয়েপিয়েথা এলাকায় চীনা অর্থ সাহায্যে পরিচালিত কল-কারখানার ওপর বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। এরপর এই দুই এলাকায় মার্শাল-ল জারি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫ বিক্ষোভকারী গুলিতে নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে মোট নিহতের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, আলজাজিরা। খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের হ্লাইংথায়া শহরে চীনের অর্থে চলা বেশ কয়েকটি কারখানায় বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২২ জন নিহত হন। শহরের সুয়েপিয়েথা এলাকায় আরও ১৮ জন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিক্ষোভকারীরা লাঠি এবং ছুরি নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় সংঘর্ষে এক পুলিশকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ১  ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন ছিল রবিবার। কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে   সে দেশের চীনা দূতাবাস থেকেও। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতকারী হ্লাইংথায়া কাপড়ের কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। যার জেরে বেশ কিছু চীনা কর্মী আটকে পড়েন সেখানে। তাই মিয়ানমারের কাছে অনুরোধ, সেখানে থাকা চীনা কর্মী এবং সম্পত্তি যেন রক্ষা করা হয়।’ মিয়ানমারের সেনা পরিচালিত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চারটি কাপড়ের কারখানা এবং একটি সার তৈরির কারখানায় আগুন লাগার পর প্রায় ২ হাজার মানুষ দমকলকে যেতে বাধা  দেয়। এর পরই নিরাপত্তারক্ষীরা ‘পদক্ষেপ’ নিতে বাধ্য হন। এদিনের ঘটনা সম্পর্কে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিত্র সাংবাদিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভয়ঙ্কর লাগছিল। চোখের সামনে দেখছি লোকদের গুলি করে মারা হচ্ছে। এই ভয়াবহ দৃশ্য আমার স্মৃতি থেকে কোনো দিন মুছবে না।’ এই ঘটনার পর পরই ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়া ও সুয়েপিয়েথা এলাকায় মার্শাল-ল আইন জারি করা হয়েছে। যদিও আগুন লাগানোর ঘটনার দায় এখনো কোনো গোষ্ঠী  নেয়নি। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মতে, এখানে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। পর্যবেক্ষণ সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস জানিয়েছে, সব মিলিয়ে দেশটিতে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভে এ পর্যন্ত দেড়শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গত রবিবার হ্লাইংথায়া এলাকার একটি হাসপাতালই ৩৪টি মৃতদেহ গ্রহণ করে ও ৪০ জন আহতকে ভর্তি নেয় বলে বার্তা সংস্থা মিয়ানমার নাও জানিয়েছে। গতকালও পাঁচজন নিহত : মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গতকালও গুলি ছুড়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। দুপুর পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। রবিবার পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৪০ জন নিহত হওয়ার পরদিনও গণতন্ত্রপন্থিদের রক্তে রঞ্জিত হলো মিয়ানমারের মাটি। ইয়াঙ্গুনের থিংগুনকিউন জেলার বাসিন্দা জিজাওয়াহ বলেন, ‘আমার হাতের ওপর তিন ব্যক্তি মারা গেছেন। গত রাতে আমরা অন্তত ২০ জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করি।’ দক্ষিণ দাগন জেলার এক বাসিন্দা মে মিয়াত নো বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী মেশিনগান ব্যবহার করেছে। তারা লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর