আবাসিক পাখি। সুলভ দর্শন হলেও স্থানভেদে বিরল। কোকিল গোত্রীয় পাখি। স্লিম গড়ন। দূর থেকে কাঠশালিকের মতো দেখায়। গ্রাম-গঞ্জের উঁচু গাছ-গাছালিতে বিচরণ করে। বিশেষ করে মুক্ত বনাঞ্চল, সাজানো বাগান এবং খামারে বেশি নজরে পড়ে। বিচরণ করে একাকী। জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়, তবে কম। ঝোপ-জঙ্গলের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখে। কেবল পোকামাকড় সংগ্রহের সময় মাটিতে নামে। এরা ঝরাপাতা উল্টিয়ে খাবার সংগ্রহ করে। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় পুরুষ পাখি করুণ সুরে ডাকে ‘পিপ্-পিপ্-পিপি-পিপ্’। কিছুক্ষণ সময় বিরতি দিয়ে পুনরায় ডাকে। এভাবে বড়জোর ৮-১০ বার ডাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর ভারত, দক্ষিণ চীন ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত এবং বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম : ‘করুণ পাপিয়া’, ইংরেজি নাম : ‘প্লেনটাইভ কুক্কু’ (Plaintive Cuckoo) বৈজ্ঞানিক নাম : Cacomantis merulinus । এরা ‘পাপিয়া’ বা ‘সরগম’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ২২-২৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়ের পাশ, থুঁতনি ও গলা ছাই-ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজ ধূসর-কালো। লেজের ডগায় সাদা ডোরা। বুকের উপরের দিক কমলা-ধূসর। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত কমলা। স্ত্রী পাখির চেহারা সাধারণত দুই ধরনের দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু দেখা যায় পুরুষ পাখির মতো। অন্যদের চেহারা ভিন্ন। পিঠ লালচে-বাদামি। ডানায় কালচে বাদামি ডোরা দাগ থাকে। লেজের ওপর-নিচ থাকে কালো ডোরা। উভয় পাখির ঠোঁট কালচে-বাদামি। চোখ লালচে।
পা বাদামি-হলদে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথায় কালচে-বাদামি ডোরা। গলা ও বুক লালচে-কমলা। পিঠ ফ্যাকাসে লালচে-বাদামি। প্রধান খাবার : নরম পোকামাকড় ও ছোট ফল। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। পরের বাসায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে প্রিনা ও ফুটকি পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের রং পালকমাতার ডিমের সঙ্গে মিল রেখে পাড়ে।