বুধবার, ২৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝুঁকিতে ৪০ লাখ জনবল, ক্ষতি ১৪ হাজার কোটি টাকা

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

ঝুঁকিতে ৪০ লাখ জনবল, ক্ষতি ১৪ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি সরকারি-বেসরকারি তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের পর্যটন খাতের সব ক্ষেত্রে ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৩ লাখ ১০ হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মতে এ চিত্র আরও ভয়াবহ।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রায় ৪০ লাখ জনবল। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, পর্যটনশিল্প পৃথিবীব্যাপী সব ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক উন্নয়নের মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশও এ ধারার ব্যতিক্রম নয়। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প এ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের প্রত্যক্ষ অবদান ছিল ৩ শতাংশ। এ ছাড়া মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ সৃষ্টি হয় এ খাতে। কিন্তু ২০২১ সালে এসে করোনার প্রকোপে প্রায় বিপর্যস্ত হতে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে। বর্তমানে ভারতে করোনার ভয়াবহ রূপ দেখা যাচ্ছে, যা চরম উদ্বেগের কারণ। এর ফলে পর্যটনশূন্য হয়ে পড়েছে ভারতসহ আশপাশের দেশগুলো। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে প্রভাবে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প-সংশ্লিষ্ট সব সেবা ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিক থেকে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তারপর কিছুদিন সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হলেও ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে তা আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে পড়তে হয়েছে সীমাহীন ক্ষতির মুখে। একদিকে পর্যটনশিল্পের উদ্যোক্তারা হারিয়েছেন মুনাফা, অন্যদিকে ব্যাপক কর্মসংস্থানহানি হয়েছে। পর্যটনশিল্পের ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টরের মধ্যে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইনস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, করোনার প্রকোপ কমে আসায় গত বছরের শেষের দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যটকের ব্যাপক সমাগম হয়। বিশেষ করে সিলেট, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পর্যটকদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

এতে ওই সব অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন। যদিও এ সময় সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অনেকে ছিল উদাসীন। এরপর ২০২১ সালের মার্চে পুনরায় করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। তবে পর্যটনের স্পটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি করতে হবে।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, করোনাভাইরাসের ধাক্কার কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের দিন দিন টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তারা যাতে কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করোনা মোকাবিলায় পর্যটনশিল্পকে দিতে হবে বিশেষ গুরুত্ব। এজন্য পর্যটনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষত অন্যান্য শিল্পের মতো পর্যটনকেও সহায়তা প্রদান করা এখন সময়ের দাবি। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ধাপে ধাপে খুলে দিতে হবে পর্যটন স্পটগুলো। এ ক্ষেত্রে পর্যটনের সঙ্গে সম্পর্কিত সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনতে হবে। যেসব পর্যটক করোনার টিকা নিয়েছেন তাদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছেন তাদের আকৃষ্ট করতে নিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, ‘পর্যটনশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সম্ভাবনাময় অধ্যায়ের নাম। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দেশের সর্বস্তরের মানুষের দায়িত্ব। এ উন্নত প্রযুক্তির যুগে এসে করোনাভাইরাসকেও মানুষ জয় করে টিকে থাকবে। পৃথিবীব্যাপী পর্যটনের স্পটগুলো চালু করার জন্য বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অনুকরণীয়। পাশাপাশি শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগুলো যথাসম্ভব মেনে চললে আমরা করোনা জয় করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর