সোমবার, ৩১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বস্তি ফিরেছে পোশাকশিল্পে

রুহুল আমিন রাসেল

মহামারী করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। এই খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বলছে- সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পোশাক কারখানাগুলো ব্যাপক অর্ডার বা ক্রয়াদেশ পেয়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতেই থাকার কথা স্বীকার করেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা।

এ প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন একটু স্বস্তি পাচ্ছি। আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। অর্ডারও বাড়ছে। যুক্তরাজ্য ৭৫ শতাংশ টিকা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও অনেক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। ফলে আমাদের পোশাকশিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অতি সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সংকট উত্তরণে মালিকদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। আমিও আত্মবিশ্বাসী। তবে আগামী তিন মাস শ্রমিকদের বেতন ঋণ সহায়তা হিসেবে দরকার। তাহলে চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে দাঁড়াবে পোশাকশিল্প।’

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিকেএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- অর্ডারের পরিমাণ আগের তুলনায় বাড়ছে। কিন্তু ক্রেতারা করোনার অজুহাত দেখিয়ে কিছুটা দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। ফলে নিট পোশাক উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতে কিছুটা লোকসানও হচ্ছে বলে দাবি করেন বিকেএমইএ এই নেতা।

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবির সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানেও পোশাকশিল্প মালিকদের স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির তথ্য মিলেছে। পরিসংখ্যান বলছে- চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ছয় দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছিল তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি।

অপরদিকে করোনাকালের সংকট কাটিয়ে পোশাকশিল্প মালিকরা স্বস্তি পেলেও অস্বস্তিতে ভুগছেন শ্রমিকরা। এ সম্পর্কে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি সাম্প্রতিক প্রকাশিত জরিপে বলেছে- করোনাকালে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করেনি ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ পোশাক কারখানা। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের ২১ শতাংশ অভিযোগ করেছেন, তারা পাওনা বুঝে পাননি। এদের ৩৬ শতাংশ বেতনের একটা অংশ মাত্র পেয়েছে। মালিকদের পক্ষ থেকেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। মাত্র ৪১ শতাংশ মালিক বলেছেন, তারা ছাঁটাই করার সময় শ্রমিকদের সমুদয় প্রাপ্য পরিশোধ করেছেন। ঢাকা ও গাজীপুরের ১০২টি কারখানার মালিক এবং ৩০০ সাধারণ শ্রমিক ও ১০০ ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

সিপিডির এই জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের ৩০ শতাংশ অভিযোগ করেছেন, করোনার পর তাদের ওপর কাজের চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রম সংক্রান্ত হয়রানির অভিযোগ করেছেন ২২ শতাংশ। শ্রম আইনে শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ধারা স্থগিত রাখা হয়েছে। এ কারণে তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ৩৭ শতাংশ কারখানা মালিক জানিয়েছেন- সামাজিক  সংলাপের অংশ হিসেবে শ্রমিকদের সঙ্গে তারা একবারও বসেননি। জরিপের সুপারিশে ছাঁটাইয়ের আগে সংলাপে বসা এবং অসংগঠিত কারখানাকে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্যপদ দেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

সর্বশেষ খবর