শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনে কর্মমুখর পোশাক শ্রমিকরা, পথে দুর্ভোগ চরমে

দূর থেকে হেঁটে আসা শ্রমিকদের জন্য পরিবহন চালুর দাবি

রুহুল আমিন রাসেল

মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনই কর্মমুখর হয়ে উঠেছেন দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প কারখানার শ্রমিকরা। অনেক শ্রমিককে চরম দুর্ভোগ সহ্য করেই কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে কারখানায় যেতে হয়েছে। তাদের জন্য নিজস্ব পরিবহন চালুর দাবি করেছেন শ্রমিকরা। পাশাপাশি সব কারখানায় শ্রমিকদের শতভাগ উপস্থিতিতে খুশি মালিকরা। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন সারা দেশের সব পোশাক কারখানায় শ্রমিকের শতভাগ সরব উপস্থিতি ছিল। কর্মপরিবেশ ছিল সামাজিক দূরত্ব মেনেই। মালিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছেন। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতাও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। তবে কারখানার বাইরে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করতে হবে।’ নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, লকডাউনে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি বেশি হলেও অনেকে পায়ে হেঁটে কষ্ট করে কারখানায় এসেছেন। যারা কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকেন তাদের সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যারা দূরে থাকেন তাদের জন্য লকডাউনের কারণে হেঁটে আসা কঠিন। এ সমস্যা সমাধানে তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের জন্য পরিবহনব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানান। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘লকডাউনে বাস বন্ধ থাকায় দূরের শ্রমিকদের জন্য সমস্যা হয়েছে। শ্রমিকরা কষ্ট করে কারখানায় এসেছেন। আমাদের দাবি হচ্ছে, যারা কারখানায় যেতে পারেননি তাদের যেন বেতন কাটা না হয়। তাদের জন্য পরিবহন চালু করতে হবে।’ সরকারের ঘোষণা মোতাবেক করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গতকাল দেশজুড়ে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। শর্ত সাপেক্ষে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। প্রথম দিনের লকডাউনে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের উপস্থিতি অন্য সাধারণ দিনের মতোই ভালো। তবে যাতায়ত সমস্যায় পড়েছেন শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সমস্যা সমাধানে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা এবং বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিবহন চালানোর অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘বিধিনিষেধের মধ্যে অনেকে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে অফিস করছেন। আবার অফিস শেষে একইভাবে বাসায় ফিরেছেন। আমরা বলেছি বিধিনিষেধ চলাকালে নিজস্ব ব্যবস্থায় কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য।’ এদিকে গতকাল সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার ধামরাইয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সকাল থেকে বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ যাতায়াতের জন্য গাড়ি না দিতে পারায় অনেক শ্রমিক হেঁটেই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। অনেকে আবার ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে ভ্যানে অথবা রিকশায় গাদাগাদি করে কারখানায় গেছেন। এতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিছু কারখানায় শ্রমিকদের প্রবেশে জীবাণুনাশক স্প্রে মেশিন থাকলেও অনেক কারখানায় তা নেই। এসব এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানান, লকডাউনের কারণে কারখানায় যাতায়াতের জন্য গাড়ি না পেয়ে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ঢাকা জেলার গুরুত্বপূর্ণ দুই উপজেলা ধামরাই ও সাভারে পোশাক কারখানা চালু রয়েছে ১৩০০-র বেশি। শ্রমিকসহ মানুষের বসবাস কয়েক লাখ।

সর্বশেষ খবর