মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এবার কী হবে

মহামারীতে আটকে আছে দেড় হাজার কোটি টাকার কাঁচা চামড়া, গতবারের দামেই কিনতে চান ট্যানারি মালিকরা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এবার কী হবে

গত ঈদে দাম না পেয়ে কোরবানির পশুর চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঢাকায় বিক্রি করতে এসে খরচ তুলতে না পেরে সে চামড়া ফেলে গেছেন ব্যবসায়ীরা। এবার লকডাউনের মাঝে কোরবানির পশুর চামড়া কীভাবে ঢাকায় পৌঁছবে এ নিয়ে উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা। গতবারের মতো এবারও চামড়ার দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক কম দামে কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। লাখ টাকা দামের গরুর চামড়াও বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। সরকার ঈদের আগে একটি দাম নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে সে দামে বেচাকেনা হয় না পণ্যটি। আড়তদাররা যে দাম নির্ধারণ করে দেন সে দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে আগামী বৃহস্পতিবার কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েক বছরের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার চামড়া অবিক্রীত পড়ে আছে। করোনা মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদাও কমেছে। এ অবস্থায় গত বছরের মতো যাতে এবারও চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় আমরা তা-ই প্রস্তাব করেছি।’ গত ঈদের আগে চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তখন ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ধরা হয়। আর ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া গত বছর প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩-১৫ টাকা করা হয়। আর বিপর্যয় ঠেকাতে কাঁচা চামড়া ও ওয়েট বøু রপ্তানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। এবারও সরকার চামড়ার দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ওয়েট বøু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। তবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির এ অনুমোদন কোরবানির পশুর চামড়ার দামে কতটা প্রভাব ফেলবে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানাচ্ছেন, আগামী বৃহস্পতিবার চামড়ার দাম ঘোষণা করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এর আগে চামড়া খাতের সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মতামত নেওয়া হবে। তবে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা মূল্য নিয়ে যতটা না ভাবছেন তার চেয়ে বেশি ভাবছেন চামড়া ব্যবস্থাপনা নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন শিথিল করে যানবাহন চলাচলের সুযোগ দিলেও এ সুবিধা ঈদের দুই দিন পর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এরপর আবার লকডাউন শুরু হলে সংগৃহীত চামড়া ঢাকায় আনার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা সৃষ্টি হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চামড়া নিয়ে যাতে আগের মতো কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা না হয় সে বিষয়ে এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার আমি বিভাগীয় কমিশনার ও দেশের সব জেলার ডিসিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করব, যাতে কোরবানির পর সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চামড়া সংরক্ষণের ক্ষেত্রে লবণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। এটি যেন সারা দেশে সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয় এ বিষয়েও স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠিতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ সঠিকভাবে চামড়ায় লবণ দিতে না পারলে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে পণ্যের দাম পাওয়া যায় না। এ কারণে স্থানীয় প্রশাসন চামড়া কেনার পর তা সংরক্ষণ ও সরবরাহের বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবে।

সর্বশেষ খবর