রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আরও ১৩ জেলায় হচ্ছে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল

আরাফাত মুন্না

ভূমির রেকর্ড সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আরও ১৩ জেলায় ল্যান্ড সার্ভে (ভূমি জরিপ) ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালের জন্য যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন করে বিচারক এবং সহায়ক আরও পাঁচটি করে পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ট্রাইব্যুনালগুলো গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য প্রস্তাবিত ১৩ জেলা হচ্ছে- ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও বরগুনা।

বর্তমানে দেশে বিদ্যমান থাকা ৪২টি ট্রাইব্যুনালে প্রায় দেড় লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। জনবলসহ নানা সংকটে এসব ট্রাইব্যুনালের

মামলা নিষ্পত্তির গতি কম। ফলে ট্রাইব্যুনালগুলোতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মামলা। নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভূমি মালিকানা রেকর্ড ও নকশার যথার্থতা সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে প্রচলিত দেওয়ানি আদালতের বিকল্প হিসেবে সারা দেশে ৪২টি ‘ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল’ গঠিত হয়েছে। বর্ণিত ১৩ জেলায় ভূমি জরিপ কার্যক্রম সমাপ্ত হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক সংক্ষুব্ধ ভূমির মালিক মালিকানা সম্পর্কিত রেকর্ড সংশোধন করতে সক্ষম হচ্ছেন না। ফলে এসব জেলায় ২০০৪ সালের সংশোধিত ‘রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন-১৯৫০’ অনুযায়ী ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকার মামলাজট নিরসনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। নতুন ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাবও সেই উদ্যোগের অংশ। এসব ট্রাইব্যুনাল গঠন হলে ভূমি জরিপের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সহায়ক হবে। জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর প্রথম ভূমি জরিপ (বিএসআর) শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। এ জরিপ এখনো শেষ হয়নি। যেসব এলাকায় শেষ হয়েছে, সেখানে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি। মাঠ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা ও অসতর্কতায় ভুলে ভরা ভূমি জরিপের খেসারত গুনতে হচ্ছে জমির মালিকদের। জরিপের পর্চা আর মানচিত্রে ভুল আর ভুল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শত বছর ধরে ভোগদখল করে এলেও মালিকের নামের পরিবর্তে জরিপে দেখানো হয়েছে অন্যের নাম। এসব সমস্যা সমাধানে ২০০৪ সালে সরকার ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করে এর ২ ধারায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল এবং ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করে। এরপর ২০১২ সালে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে সরকার। এরপর থেকে ভূমি জরিপ রেকর্ডে ভুলত্রুটি হলে জমির মালিকরা প্রতিকার পেতে এসব ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকরা ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলার শুনানি করেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনটি আবারও সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন সংশোধন করে যুগ্ম জেলা জজদের পাশাপাশি সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজদেরও ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলা শুনানির এখতিয়ার দেওয়ার বিধান থাকবে সংশোধিত আইনে।

 

সর্বশেষ খবর