শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ক্ষোভের অনলে জ্বলছে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

সেই শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মানসিক নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন শিক্ষক সমিতির, জড়িতদের শাস্তি দাবিতে সিন্ডিকেটের বৈঠক, তদন্ত কমিটির দুজনের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

সেই শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের লাঞ্ছনা ও অপদস্থের শিকার হওয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ক্যাম্পাস। ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু ও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন শিক্ষকরা। অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষক সমিতি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন। গতকাল সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমবেত হন শিক্ষকরা। এরপর বেলা সোয়া ১১টায় প্রতিবাদ র‌্যালি বের করেন। দুপুরে ক্যাম্পাসে দুর্বার বাংলা পাদদেশে শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা করেছে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস। শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যু কোনো অবস্থায় স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে অধ্যাপক ড. পিন্টু চন্দ্র শীল বলেন, আমরা শিক্ষকরা এখন সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি সবাইকে সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দেন। সমাবেশে সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন মঙ্গলবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার বিবরণ দেন। শিক্ষকদের এই সমাবেশের সময় পাশেই ফাঁকা স্থানে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও। জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মৃত্যুর আগে তিনি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন। সেলিম হোসেন একই সঙ্গে কুয়েটের লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। এ হলের ‘ডাইনিং ম্যানেজার’ নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিম হোসেনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ছাত্রলীগের কয়েকজন মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে তার গতিরোধ করেন। তারা ওই শিক্ষককে তড়িৎ প্রকৌশল ভবনে তার ব্যক্তিগত কক্ষে এনে আনুমানিক আধা ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে ড. সেলিম হোসেন দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় যান। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, সেলিম হোসেন বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। এরপর দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে বিপথগামী ওই ছাত্রদের সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম বয়কট করবেন। শিক্ষকরা এ ঘটনার আইনি বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা ও অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান। কুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান গতকাল প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, তারা তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে অধ্যাপক সেলিমের সঙ্গে কথা বলেন। তারা কোনো দুর্ব্যবহার বা মানসিক চাপ দেননি। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চাওয়া একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি তার। তদন্ত কমিটির দুই সদস্যের পদত্যাগ : ড. সেলিমের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে তদন্ত কমিটিতে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর