রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বছরের প্রথম দিনে নতুন বই, খুশি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরের প্রথম দিনে নতুন বই, খুশি শিক্ষার্থীরা

বই হাতে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ছবিটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে তোলা -জয়ীতা রায়

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসায় বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ করা হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দ আর খুশিতে মেতেছে ছাত্রছাত্রীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে তিন ভাগে ভাগ করে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করা হচ্ছে। সে হিসেবে গতকাল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। ১৩ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ শেষ করবে মন্ত্রণালয়। রাজধানীর কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে গতকাল ষষ্ঠ শ্রেণির বই বিতরণ করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্ বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির ছাড়া সব বই পেয়েছি।’ বইয়ের ছাপা ও মানে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। নতুন বই পেয়ে স্কুলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী জানায়, ‘বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। নতুন বই নতুন বছরের উপহার আমাদের কাছে।’ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিতরণ নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. সাইদুর রহমান জানান, প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় শতভাগ বই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই স্কুলগুলোয় পাঠানো হয়েছে। আর মাধ্যমিকের প্রায় ৯৫ শতাংশ বই স্কুলগুলোয় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাকি বইগুলো শিগগিরই পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে গতকাল দেখা যায়, চতুর্থ ও অষ্টম শ্রেণিতে গতকাল বই বিতরণ করা হয়েছে। বই পেয়ে আনন্দে-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে ছাত্রছাত্রীরা। রাজশাহী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সকাল থেকে রাজশাহীর স্কুলগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বই। নতুন বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, এ বছর বরিশাল জেলায় প্রাথমিকে সাড়ে ১৪ লাখ বইয়ের চাহিদা থাকলেও বই এসেছে ১৩ লাখ। মাধ্যমিকে ৪৩ লাখ চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত বই এসেছে ২৫ লাখ। এ কারণে গতকাল সবার হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যায়নি। কয়েকদিনের মধ্যে সব বই পাওয়া যাবে বলে জানান সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা। নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়ে পুলকিত শিক্ষার্থীরা।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, শহরের বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বই বিতরণের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক। নতুন বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, বগুড়ায় মাধ্যমিক শাখায় বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৩৬ লাখ ১ হাজার ৯৮৮টি। এর মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১৮ লাখ ৯ হাজার ৪৮৩টি। সিলেট থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, স্কুলে স্কুলে বই উৎসব না থাকলেও উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না শিক্ষার্থীদের। বছরের প্রথম দিন হাতে নতুন বই পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে তারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর সিলেটে দুটি প্রাথমিক ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসব হয়েছে। বাকিগুলোয় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বই। মহানগরের জিন্দাবাজারে সরকারি কিন্ডারগাটর্েুন স্কুল ও দুর্গাকুমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওশিন তাবাসসুম বলে, ‘আমাদের কাছে নতুন বছর মানেই হচ্ছে নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়া, নতুন বই হাতে পাওয়া।’

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাও বছরের শুরুতে পেয়েছে নিজ মাতৃভাষার নতুন বই। বই উৎসবের আমেজে উচ্ছ্বসিত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের খুদে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে রাঙামাটি জেলা শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে বিতরণ করা হয় নতুন বই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে ৭ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ২ হাজার ১৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার ৩২০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। দুপুরে ময়মনসিংহ মহানগরের নওমহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। নতুন বই পেয়ে সরকারি বালিকা বিদ্যালযর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুচি আক্তার বলে, ‘নতুন বই হাতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’ কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চরাঞ্চলের স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে গতকাল বই তুলে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে বইয়ের চাহিদা ছিল ৩৯ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৫টি। এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে ১০ লাখ ৯১ হাজার ১৬০টি।

সর্বশেষ খবর