বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সংক্রমণের রেড জোনে ১২ জেলা

শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়ছেই, ৬৩ দিন পর ফের বাড়িতে রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার টানা বাড়ল ১৮ দিন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৯ হাজার ৫০০ মানুষের দেহে, যা গত ১২ আগস্টের পর এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৬৫ দিন পর আবার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুও বেড়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ ১২ জেলাকে রেড জোন বা উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৮৩০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ২৫.১১ শতাংশ, যা গত ৭ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ২৩.৯৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ১২ জন, যা আগের দিন ছিল ১০ জন। গত ১৭ নভেম্বরের পর গত ২৪ ঘণ্টায় আবারও একজন করোনা রোগী বাড়িতে মারা গেছে। মাঝের দিনগুলোতে সব মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

এদিকে গত সপ্তাহের শনাক্তের হার বা সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় ১২টি জেলাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেড জোন বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ৩২টি জেলাকে মধ্যম ঝুঁকির ও ১৯টি জেলাকে স্বল্প ঝুঁকির এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুঁকির মাত্রা বোঝাতে সাতটি রঙে ৬৪ জেলাকে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো হলো- অধিকতর গাঢ় লাল (পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০%-৩৯%), গাঢ় লাল (পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০%-২৯%), লাল (পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০%-১৯%), কমলা (পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫%-<১০%), সবুজ (পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার < ৫%), সাদা (পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার শূন্য) ও ধুসর (১০০ এর কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে) রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে। শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি থাকলেই তাকে উচ্চ ঝুঁকির, ৫ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে থাকলে মধ্যম ঝুঁকির ও ৫ শতাংশের নিচে থাকলে কম ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে। অধিদফতরের তথ্য বলছে, করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি জেলা। মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও। ধূসর ক্যাটাগরিতে রয়েছে বান্দরবান। বাকি ১৯ জেলা রয়েছে স্বল্প ঝুঁকিতে (সবুজ)। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে দেশজুড়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪০৫ জন, যা পূর্ববর্তী সাত দিনের (৩ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি) চেয়ে ২৩ হাজার ৯৩১ জন বেশি। বৃদ্ধির হার ২২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের, যা পূর্ববর্তী সপ্তাহের (৩ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি) চেয়ে ৩৭ জন বেশি। বৃদ্ধির হার ১৮৫ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে ঢাকায় করোনাভাইরাসের ৬২ হাজার ২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ হাজার ৪৩৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এ কারণে ঢাকাকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৫ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৮ জন। মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৭৬ জন। গত এক দিনে মৃত ১২ জনের মধ্যে ৮ জনই ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে ঢাকা জেলাতেই মারা গেছেন ৬ জন। এ ছাড়া ঢাকা জেলাতেই শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৮৮ জন করোনা রোগী, যা মোট রোগীর ৬৮ শতাংশের বেশি। এদিকে মধ্যম ও নিম্ন ঝুঁকিতে থাকা অনেক জেলায় শনাক্তের হার গত ২৪ ঘণ্টায় উচ্চ ঝুঁকির ঘর পার করেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে ঢাকার বাইরে সংক্রমণের খন্ডচিত্র-বান্দরবানে শনাক্তের হার ৪৯ শতাংশ : গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৮.৯৪ শতাংশ। তবে পুরো সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় এই জেলাকে এখনো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়নি।

খুলনায় শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ : খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গত এক দিনে ১ হাজার ৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৮৫ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৬.৩১ শতাংশ, যা আগের দিনের তুলনায় ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে।

বরিশালে শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ : বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে সব শেষ গত মঙ্গলবার রাতের রিপোর্টে ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। শনাক্তের হার ২৬.৩৮ ভাগ। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় নানা উপসর্গ নিয়ে দুজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বিনামূল্যে মাস্ক, ১০ দিন আইসোলেশনের সুপারিশ

ওমিক্রনেই বিদায় হতে পারে কভিড : ফাউচি

সর্বশেষ খবর