শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ফ্লাইওভারে মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে মিলল ছিনতাইকারী চক্র

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকা এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু বলে লাশের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ উদ্ঘাটন করেছে সেটি অপমৃত্যু নয়, হত্যা। এর নেপথ্যে লেগুনার হেলপার ও যাত্রীর বেশে থাকা একটি ছিনতাইকারী চক্র। নিহত ব্যক্তির নাম মহির উদ্দিন (৫০)। তিনি মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন।

তার ছেলে খাইরুল ইসলাম বাবাকে না পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় নিখোঁজের অভিযোগ করেন। এরপর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে বাবার লাশ শনাক্ত করেন। মহির উদ্দিনের গন্তব্য ও লাশ পাওয়ার স্থানের ভিন্নতা দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রথমে ঘটনাস্থলের উপস্থিত ব্যক্তিরা অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে ধরে নেন। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলাও হচ্ছিল। কিন্তু মৃত্যুর ধরন ও কথিত দুর্ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি দেখে আমার সন্দেহ হয়। এরপর তদন্ত শুরু করে রহস্য পাওয়া যায়। পরে জানা গেল ওই   ব্যক্তিকে ছিনতাইকারীরাই হত্যা করেছে।’ এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন রিপন, রুবেল, মনজু ও আবদুর রহমান। তারা বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২২ জানুয়ারি ভোর ৫টায় মহির উদ্দিন মাছ কিনতে যাত্রাবাড়ী আড়তে যাওয়ার জন্য সাইনবোর্ডের বাসা থেকে বের হন। তিনি সাদ্দাম মার্কেট মেইন রোড থেকে একটি লেগুনায় ওঠেন। গাড়িটি যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের সামনে না থেমে গুলিস্তানগামী ফ্লাইওভারের ওপর উঠে যায়। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর ফ্লাইওভারের ওপর লেগুনার ড্রাইভার, হেলপারসহ চার ছিনতাইকারী ছিনতাই করে চলন্ত গাড়ি থেকে মহিরকে ফেলে দেন। ফ্লাইওভারে পড়ে থাকতে দেখে অন্য গাড়ির চালক মহিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। বিষয়টিতে সন্দেহ হলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিল্লাল আল আজাদকে। তিনি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি লেগুনা গাড়ি শনাক্ত করেন। লেগুনাটি শনাক্ত করতে তিনি যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, কোনাপাড়া, চিটাগাং রোড, জালকুড়ি লেগুনাস্ট্যান্ডে কখনো হেলপার, কখনো যাত্রীবেশে ঘুরে বেড়ান। ২৪ জানুয়ারি তিনি হেলপারির কাজ করা অবস্থায় ওই লেগুনার খোঁজ পান। এরপর সেটি বের করতে কদমতলীর পাটের বাগে বুলুর গ্যারেজে যান। সেখানে লেগুনার পেছনে লাল রঙের একটি নির্দিষ্ট চিহ্ন সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে জব্দ করা হয়। লেগুনাটি জব্দের পর ড্রাইভার ও হেলপার সম্পর্কে তথ্য নিয়ে জানা যায় লেগুনার মূল ড্রাইভার ফরহাদ তার শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে গিয়েছেন। ২৫ জানুয়ারি ওই ড্রাইভারকে তার শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুর থেকে আটকের পর জানা যায় ঘটনার আগের দিন বেলা ১২টায় তিনি লেগুনাটি মনজু ও আবদুর রহমানের কাছে দিয়েছিলেন। ওইদিনই রাজধানীর কদমতলী থেকে আবদুর রহমানকে আটক করে পুলিশ। আবদুর রহমানের তথ্যানুযায়ী চিটাগাং রোড থেকে মনজুকে আটক করা হয়। পরদিন কদমতলী থেকে রিপন ও রুবেলকে আটক করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল আল আজাদ জানান, এরা ২২ জানুয়ারি রাত ২টায় শহীদ ফারুক রোড থেকে এক যাত্রীকে তোলেন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। ওই যাত্রীকে সাইনবোর্ডে না নামিয়ে লেগুনাটি চিটাগাং রোডের দিকে যেতে চায়। সন্দেহ মনে হলে লেগুনাটি স্পিড ব্রেকার পার হওয়ার সময় লাফ দিয়ে নেমে যান ওই যাত্রী। এরপর ভোরে তারা মাছ ব্যবসায়ী মহিরকে তোলেন। এরপর ফ্লাইওভারের ওপর মহিরের থেকে ৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর তারা ডেমরা-রূপগঞ্জ এলাকার চনপাড়া বস্তিতে যান। সেখানে ২ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে সেবন করেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর