শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন

স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের মানববন্ধন

প্রতিদিন ডেস্ক

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সিলেটে টানা ১৩ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। গতকালও তারা বাগানে কাজে যাননি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন চা শ্রমিকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকালও বাগানে বাগানে ছিল অচলাবস্থা।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি জানান, গতকাল আন্দোলনের ১৩তম দিনেও উপজেলার ৩৯টি চা বাগানে ধর্মঘট চালিয়ে গেছেন শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে বাগানে বাগানে শ্রমিকরা মিছিল সমাবেশ করেছেন। সকালে খেজুরিছড়া চা বাগানের মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শ্রমিক সন্তানরা। পরে তারা সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, চা শ্রমিকরা গতকাল দুপুর থেকে মৌলভীবাজার পৌর শহরের বেড়িরপার এলাকায় মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে। এ সময় উভয় পাশে আটকা পরে কয়েক শ গাড়ি। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে শহরবাসীকে। এদিকে শ্রমিকরা মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কও অবরোধ করে আন্দোলন করে চা শ্রমিকরা। নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট জানান- গতকাল সিলেটের লাক্কাতুরা, মালনিছড়া ও তারাপুরসহ সব বাগানে ছিল অচলাবস্থা। কর্মবিরতির পাশাপাশি শ্রমিকরা বিভিন্ন বাগানে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পঞ্চায়েতের বৈঠকেও আন্দোলনে অনড় ছিলেন চা শ্রমিকরা। সিলেটে চা শ্রমিকদের একাংশের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অজিত বারাইক বলেন, ‘১২০ টাকায় পেট চলে না তাই আমরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলাম। কিন্তু মালিকপক্ষ এতটাই নিষ্ঠুর যে- আমাদের খালিপেটের আর্তনাদ তাদের কঠিন হৃদয়কে নাড়া দেয় না। তাই আজ পর্যন্ত আমাদের দাবি তারা মানছেন না। আমরাও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ- দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মরণ হলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ আন্দোলন আরও বেগবান করতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের ডাকে বিকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট চা বাগানের শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহন রবি দাসের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন কালিঘাট চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি অবান তাঁতি।

এই সভায় বালিশিলা, লংলা, মনু-ধলই, জুরি ও লস্করপুর ভ্যালির চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রধান ও সাধারণ শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে মোহন রবি দাসকে আহ্বায়ক ও অবান তাঁতিকে সদস্য সচিব করে চা শ্রমিক অধিকার পরিষদ নামে একটি নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়।  মোহন রবি দাস বলেন, চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এগিয়ে নিতে এই নতুন সংগঠন করা হয়েছে। এই সংগঠনে দেশের প্রতিটি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র যুবক ও মহিলাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। এখন থেকে এই কমিটি শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায়ের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে।  এর আগে সকালে শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দফতর কার্যালয়ে শ্রম অধিদফতরের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলামের আহ্বানে বালিশিরা ভ্যালির পঞ্চায়েত নেতাদের নিয়ে সভা হয়। সভায় জেলা, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  ওই সভা থেকে বের হয়ে রশিদপুর চা বাগান পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক দুলন চাষা বলেন, ‘আমরা ডিডিএল’র ডাকে এসেছি। এখানে এনে আমাদের কাজে যোগদান করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা তাদের কথা মানিনি।’ সাইফ চা বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি কবির মিয়া বলেন, বাগানে কাজ বন্ধ। শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। অনেকে হাঁস-মুরগি বিক্রি করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে এই সভায় এসেছেন। কিন্তু এখানে এনে আমাদের ওই একই কথা বলা হচ্ছে। কাজে যোগ দেন। কিন্তু আমরা তো আগেই বলে দিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে না শুনলে আমরা কাজে যোগ দেব না।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীর মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘আমরা যে ওদের জন্য কাজ করছি, মূলত এটা বোঝানোর জন্যই পঞ্চায়েত নেতাদের নিয়ে বসেছিলাম। তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। কাজে যোগ দেয় এটাই বলেছি।’

উল্লেখ্য, ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় দৈনিক মজুরি উন্নীতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন। প্রথম দুই দিন ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকে চা শ্রমিক নেতারা কাজে যোগদানের ঘোষণা দিলেও সাধারণ শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান। আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি কথা বলতে চান। মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে আশ্বাস পেলে তারা কাজে ফিরে যাবেন।

সর্বশেষ খবর