সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনার ১২ কারণ চিহ্নিত

নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিআরটির কাজ এগিয়ে নেওয়ার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের দুর্ঘটনা এড়াতে ভবিষ্যতের জন্য করণীয় বা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। চুক্তি অনুযায়ী, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। এ ছাড়া উত্তরার গার্ডার দুর্ঘটনার ১২ কারণ চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। ওই দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি দায়ী। তাদের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলনকক্ষে সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের বিষয়ে ব্রিফ করে উল্লিখিত তথ্য জানান।

সচিব বলেন, কমিটির সুপারিশে বলা হয়- ভারী কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিদর্শনের অনুমোদন না করানো এই দুর্ঘটনায় একটি প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। রাস্তায় এ ধরনের যে কোনো ভারী কাজ যা যানবাহন চলাচলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা থাকবে তা অবশ্যই পরিদর্শন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথভাবে অনুমোদন করে তারপর কাজ সম্পাদন করা যেতে পারে। সড়ক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সময় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে প্রকৌশলী বা পরামর্শক, সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন। গার্ডার স্থানান্তরসহ যে কোনো ভারী কাজ রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সম্পাদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ডাইভারশন এবং প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা নিশ্চিত করতে হবে। সড়কের ওপর যে কোনো অবৈধ পার্কিং বিশেষ করে এ ধরনের নির্মাণপ্রকল্প এলাকায় বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এ ধরনের নির্মাণ কাজের স্থান পুরোপুরি যথাযথ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে বেষ্টনীকে সঠিকভাবে দৃশ্যমান করার জন্য সাইন, সিগন্যাল, মার্কিং, লাইটিং, রেপ্লিকেটর ব্যবহার করতে হবে। সুপারিশে বলা হয়, ক্রেন অপারেটরের লাইসেন্স থাকতে হবে। কনস্ট্রাকশন কাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি যেমন- ক্রেন, এক্সকাভেটর, টেইলর ইত্যাদি নিবন্ধন আছে কি না এবং ওই সমস্ত যন্ত্রপাতি/যানবাহন চালকের লাইসেন্স আছে কি না সে ব্যাপারে বিআরটিএ তদারকি করতে পারে। দুর্ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডারচাপায় প্রাইভেট কারে থাকা শিশুসহ পাঁচ যাত্রী নিহত হন। এতে আহত হন একই গাড়িতে থাকা এক নবদম্পতি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে সরকার।

ওই কমিটি গার্ডার দুর্ঘটনার ১২ কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- ১. পূর্বানুমতি ছাড়া জাতীয় শোক দিবসে সরকারি ছুটির দিনে কাজ করা হয়েছিল। ২. প্রথমবারের মতো দিনের বেলায় গার্ডার স্থানান্তর করা হয়। অথচ দিনের বেলা কাজ করার অনুমতি নেই। রাত ৮টার পর কাজ শুরুর কথা। ৩. ক্রেনটি সহকারী অপারেটর/হেলপার চালাচ্ছিলেন। ৪. লাইসেন্স না থাকা। ৫. দুর্ঘটনার সময় ক্রেনের জায়গা ছিল অসমতল। ৬. ক্রেনটির ডিজিটাল মনিটর ছিল না। ৭. কাজের পূর্বানুমতি ছিল না। ৮. সুনির্দিষ্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ছিল না। ভারী কাজ করার সময় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কাজে কেউ ছিল না। ৯. ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের যোগ্যতা না থাকা। ১০. যারা কাজ করতে এসেছিলেন তাদের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার যোগ্যতা না থাকা। ১১. জরুরি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ছিল না। এবং ১২. ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নিয়োগ অনুমোদিত ছিল না।

সর্বশেষ খবর