শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

লিবিয়ায় নির্যাতন দেশে মুক্তিপণ আদায় চক্র মাদারীপুরে

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ইতালি নেওয়ার কথা বলে প্রথমে নেওয়া হয় লিবিয়ায়। সেখানে আটকে রেখে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। কখনো সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয় স্বজনদের কাছে। আবার কখনো ভিডিও কলে দেখানো হয় সেই নির্মম নির্যাতন। যা করা হয় শুধু মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্যই। এমন একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে মাদারীপুরে।

মানব পাচারের শিকার এমন একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ লোমহর্ষক তথ্য। এ চক্রটি প্রথমে অল্প খরচে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। লিবিয়ায় নেওয়ার পর তাদের দুর্গম কোনো স্থানে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুক্তিপণের জন্য নির্যাতনের মূলহোতা মাফিয়া শরীফ। মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের নতুন মাঠ গ্রামের সাকা মাতুব্বরের মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন শরীফ। সুমিসহ একাধিক দালাল মাদারীপুর থেকে লোক সংগ্রহ করে লিবিয়ায় পাঠায়। নির্যাতনকারীদের আরেকজন আজিজুল ইসলাম নির্ঝর (২৭)। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজিজুল হক নির্ঝর মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের আবুল কালাম হাওলাদারের ছেলে। তিনি আটকদের নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করতেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের রাকিব ফরাজী নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘শরীফের ক্যাম্পে আমি বন্দি ছিলাম। ক্যাম্পে থাকার দুই মাসের মধ্যে নির্ঝরের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুজন মারা যান। আমাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলেছিল। জ্ঞান ফেরার পর আবারও মেরেছে।’

আরেক ভুক্তভোগী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বনি আমিন বলেন, তাকে কয়েক দফায় নির্যাতন চালানো হয়। পরে শরীফের স্ত্রী সুমিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমন হাজারও মানুষের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করছে চক্রটি।

মুন্সীগঞ্জ জেলার মোল্লাকান্দি গ্রামের সেলিম শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর শেখকেও (২৭) নির্যাতন করা হয়। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন লিবিয়ায়। সেখানে মাফিয়ার খপ্পরে পড়ে বিভীষিকাময় জীবন কেটেছে তার। ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, ‘নির্ঝর কাউকেই ছাড়ত না। গলায় পাড়া দিয়ে, দাড়ি টেনে কাঠের লাঠি দিয়ে পেটাত। আমাকে করা নির্যাতন দেখে বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরেছেন অভিযুক্ত আজিজুল হক নির্ঝর। তিনি বলেন, আমি কারও কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করিনি। আমি ক্যাম্পে ভালো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য এটা করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়।’ লিবিয়ায় অবস্থানরত মাফিয়া শরীফের হোয়াটস আপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এসএমএস করলেও জবাব দেননি। তার স্ত্রী সুমি আক্তার ও পরিবারের অন্য সদস্যরা কয়েক মাস এলাকা ছাড়া। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আমরা মানব পাচারকারীদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করছি, অনেককে গ্রেফতারও করেছি।

সর্বশেষ খবর