মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এবার মাঘের শীতেও লোডশেডিং

♦ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুতের লুকোচুরি ♦ কয়লা সংকট ♦ রামপাল ও পায়রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ

জিন্নাতুন নূর

বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গত বছর টানা কয়েক মাস বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের। সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় শীতে বিদ্যুৎ সংকট কেটে যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া রামপাল ও পায়রার বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসার পরও সংকট কিছুটা কমবে বলে জানানো হয়। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং এবার মাঘের শীতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে দিনে-রাতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেশ কয়েকবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম হলেও তা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়লা সংকটে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ২৮ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে কয়লা আমদানি হচ্ছে। এতে সংকট কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতের ভরা মৌসুমেও এখন দিনে ছয় থেকে সাত শ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। দেশের বেশ কিছু এলাকায় দিনে-রাতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সম্প্রতি উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র শীত থাকার পরও সেখানে এক একবার বিদ্যুৎ গিয়ে ঘণ্টাখানেকের আগে ফিরছে না। গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের কাছে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। আবার লোডশেডিংয়ের কারণে এই শীতেও স্বস্তিতে নেই ঢাকার বিদ্যুতের গ্রাহকরা। বেশ কয়েকদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে। মিরপুর-১২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা জাকির তালুকদার বলেন, এর আগে শীতকালে এভাবে লোডশেডিং হতে দেখিনি। তিনি বলেন, শীতেই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে গরমে ও রোজায় কী অবস্থা হবে! গ্রাহকরা জানান, শীতে বৈদ্যুতিক পাখা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার না হলেও গিজার, হিটার-এর ব্যবহার বেশি হয়।

গত বছর জুলাই মাসে শুরু হওয়া লোডশেডিং নভেম্বরে গিয়ে স্বাভাবিক হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। শীতের শুরুতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ভরা শীতে আবারও লোডশেডিং ফিরে এসেছে। শীতে সাধারণত গড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। পিডিবির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, ২২ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৫২৭ মেগাওয়াট। সরবরাহ হয় ৯ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এদিন বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৩০১ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্টরা জানান, সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর থেকে দেশে ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কয়লার অভাবে একদিকে রামপাল অন্যদিকে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় কয়লার আমদানিও হচ্ছে না। আবার উৎপাদন ব্যয় কমাতে জ্বালানি তেলচালিত বেশির ভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ জন্য দেশব্যাপী লোডশেডিং হচ্ছে। যদি উৎপাদন পরিস্থিতি উন্নতি না হয় তাহলে আসছে সেচ মৌসুম ও গরমে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নভেম্বর থেকে বিদ্যুতের সংকট কেটে যাবে বলে গ্রাহকদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক যে, তা পুরোপুরি কাটেনি। যদিও শীতে চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট থেকে ১০ হাজারে নেমে এসেছে। কিন্তু এখন সেই চাহিদাও পূরণ করতে না পারা দুঃখজনক। রামপাল ও পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা আমদানি করতে না পারায় এই লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করছি ২৮ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়া থেকে ১ লাখ টন আমদানিকৃত কয়লা দেশে আসবে। যা আগামী দুই-তিন মাস ব্যবহার করা যাবে। এই কয়লায় বিদ্যুতের সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ খবর