শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাঠে আওয়ামী লীগ বিএনপি জাপা

নজরুল মৃধা, রংপুর

মাঠে আওয়ামী লীগ বিএনপি জাপা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব আসনেই প্রতিটি দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের মিত্র দল হলেও রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হওয়ায় সেখানে দল দুটি কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আবার আওয়ামী লীগও চাচ্ছে হারানো দুটিসহ ছয়টি আসনই নিজেদের কাছে রাখতে। রংপুর জেলায় ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে চারটি এবং জাতীয় পার্টির দুটি। এবার জাতীয় পার্টি অথবা বিএনপি কটি আসন পাবে- এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে রংপুরের ছয়টি আসন থেকে কমপক্ষে ২০ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

মহানগর আওয়মী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাসেম বলেন, আওয়ামী লীগ আগামীতে যে কোনো নির্বাচনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব হাজি আবদুর রাজ্জাক বলেন, রংপুরে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি রংপুরের ছয়টি আসনেই জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু নিজে নির্বাচনের অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এবার রংপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জামানত হারাবেন।

রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) : এ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মুখিয়ে আছেন। জাতীয় পার্টির দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে এখানে দলটি রাঙ্গার পরিবর্তে অন্য প্রার্থী দেবে। সে ক্ষেত্রে রাঙ্গা কী করবেন, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। এ আসনে জাতীয় পার্টির জেলা সদস্যসচিব হাজি আবদুর রাজ্জাক নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রচারেও রয়েছেন।

এখানে আওয়ামী লীগের সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুসহ একাধিক নেতার নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির উপজেলা সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু, জেলার সাবেক যুগ্মসম্পাদক মোকারম হোসেন সুজন, সাবেক যুবদল সভাপতি মিজানুর রহমান লুলু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) : এ আসনে এমপি আওয়ামী লীগের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক ডিউক চৌধুরী। তিনি পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি মনোনয়ন পাবেন নাকি অন্য কাউকে দেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে জাতীয় পার্টিও এ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন জেলা নেতারা। এখানে জাপার সাবেক এমপি আনিছুল হক মন্ডল, মোকাম্মেল হোসেন চৌধুরীর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির দুই সাবেক এমপি মো. আলী সরকার ও পরিতোষ চক্রবর্তী এবং সাবেক ছাত্রনেতা মাহফুজ উন নবী ডনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

রংপুর-৩ (সদর) : ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে এ আসনটি। জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে সাদ এরশাদ বর্তমানে এ আসনের এমপি। অনেকে মনে করছেন, এ আসনটি কৌশলের কারণে জাপাকে ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। তবে এখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল নির্বাচন করতে আগ্রহী। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবার সদর আসন ছাড় দিতে নারাজ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মহানগর আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু, বিএনপি নেতা কাউসার জামান বাবলা দলীয় প্রার্থী হতে চাইবেন।

রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) : এ আসনের বর্তমান এমপি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিগত নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। বিএনপির এমদাদুল হক ভরসা ১ লাখের বেশি ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এবার এমদাদুল হক ভরসা ছাড়াও বিএনপির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আবু নাসের মাহাবুবের নামও দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) : এ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। এখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভক্তি রয়েছে। এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পৃথক দুটি গ্রুপ পৃথকভাবে দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালন করায় নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভেদের দেয়াল তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মিঠাপুকুরে জামায়াত-শিবিরের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এ আসনটি ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টি। উপজেলা জাপার আহ্বায়ক মেজবাহুল ইসলাম মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন এমনটা শোনা যাচ্ছে। এখানে বিএনপির যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানি ও সাজেদুর রহমান। তবে কেউ কেউ বলছেন এ আসনে জামায়াত প্রার্থী দিতে পারে। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) : এ আসনের এমপি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ আসনটি জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে ছাড় দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিএনপির জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জাদুর এ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর