শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নিয়মনীতি মানছে না ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো

♦ রাত ৮টার পরও খোলা রাখা হচ্ছে দোকানপাট ♦ রেস্টুরেন্ট পরিচালিত হচ্ছে গভীর রাত পর্যন্ত ♦ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেদার চলছে আলোকসজ্জা

জিন্নাতুন নূর

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নিয়মনীতি মানছে না ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর সব ধরনের দোকানপাট, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি না থাকায় রাজধানীর অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নিজেদের খেয়ালখুশিমতো রাতে দোকান বন্ধ করছে। ফলে আগের নিয়মেই পাড়ামহল্লার দোকানিরা নিজেদের দোকান চালাচ্ছেন। গভীর রাত পর্যন্ত হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো খোলা থাকছে। এমনকি বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও অফিসে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। যদিও সরকারি এই নির্দেশ অমান্য করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তদারকিতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে গত বছরের ২৪ আগস্ট থেকে দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসের সময়সূচি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। পরে ১৫ নভেম্বর থেকে অফিসের নতুন সময়সূচি নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিসসূচি ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

শুরুতে সরকারি নির্দেশনা মানতে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত হলেও এখন শিথিলতা চলে আসায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দোকান চালাচ্ছেন। সম্প্রতি মিরপুর ১, ২, ১০, ১১ ও ১২, ধানমন্ডি, বনশ্রী, মগবাজার, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, তালতলা, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই দোকানিরা গভীর রাতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করছেন। রাত ১০টা পর্যন্ত খাবারের দোকান খোলা রাখার কথা থাকলেও বড় রেস্টুরেন্টগুলো ১২টা পর্যন্তও খোলা থাকছে। আর বড় শোরুমগুলো রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ফুটপাতের অবৈধ সংযোগ নিয়ে যে দোকানগুলো চলছে সেগুলোও ১০টার আগে বন্ধ হচ্ছে না। এমনকি কাঁচাবাজারগুলোয়ও রাত ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে।

মিরপুর ১০-এর হোপ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানে জামাকাপড়, গৃহস্থালি সামগ্রী, ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, অভিযান শুরু হলে তারা দোকান বন্ধ করে দেন, না হলে আগের মতোই দোকান চালিয়ে যান। তারা আরও বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাত ৮টায় দোকান বন্ধ করে দিলে ব্যবসায় ক্ষতি হবে, এতে তাদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা না করার জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। বিয়ের মৌসুম হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও বাসাবাড়ি আলোকসজ্জা এবং সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে রাতভর রঙিন বাতি জ্বালাতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবসভিত্তিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য দোকানপাট ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা না করার সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা ‘নির্দেশনা না মেনে দোকানপাট খুলে রাখা’র বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মনিটরিং করছি। কোথাও কোথাও হয়তো এটি মানা হচ্ছে না। এজন্য মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। আমাদের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতাপ্রাপ্ত, তারা বিষয়টি তদারক করছেন। এর সঙ্গে বাজার সার্কেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা এ অভিযানে থাকছেন। সপ্তাহে এক বা দুই দিন এ অভিযান চালানো হচ্ছে। ওষুধের দোকান এ নির্দেশনার বাইরে রয়েছে। কিন্তু ওষুধের দোকানের মতো আরও অনেকে এ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

 

সর্বশেষ খবর