বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঋণের বোঝা বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর

মানিক মুনতাসির

ঋণের বোঝা বাড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা থেকে নিজেদের অর্থনীতি বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। পাশাপাশি বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সংকট আরও বেশি বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। তবে যেসব দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো, সেসব দেশ তুলনামূলক কম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়েছে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে। এ ছাড়া ডলার ও ইউরোর বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে না পারায় এসব দেশে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির চাপ। ফলে দেশগুলো তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বৈদেশিক ঋণের দিকে ঝুঁকছে; যা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কৌশলে নেমেছে এসব দেশ। এতে দেশগুলোরে বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ছে বলে মনে করে সংস্থাটি।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেকটাস জানুয়ারি, ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিষয়ে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে হতাশার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। এতে পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বব্যাংক ২০২৩ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসবে। বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে সংস্থাটি থেকে বলা হয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। তার আগে জুনে পূর্বাভাস দিয়েছিল, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন তো পরিস্থিতিটা এমন যেন সবাই সংকটে রয়েছে। তবে আমাদের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলো বেশি সংকটে পড়েছে। সংকট এড়াতে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়ানো জরুরি। এজন্য বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে হয়। আবার ডলারের দামও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। ফলে ঋণ তো এক হিসেবে বাড়ছেই। এটা উন্নত দেশগুলোর বেলায় কম। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটা অনেকটা বাড়তি চাপ বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, বিদায়ী অর্থবছরে (২০২১-২২) মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২৪ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১০১ টাকা দরে) তা প্রায় ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) মাথাপিছু এ ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯৯ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার ৪৭০ টাকা। এক অর্থবছরের ব্যবধানে পরিবর্তিত ডলার মূল্যে এ ঋণের পরিমাণ মাথাপিছু বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ২৭০ টাকা। অন্যদিকে দিন দিন কমছে সহজ শর্তের বা স্বল্পসুদের ঋণ। এক বছরে ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এ ঋণের বোঝাটা বেড়েছে। তবে এটা পরিশোধে বাংলাদেশ সক্ষম বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থা দুটির মানদ অনুযায়ী জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি যে কোনো দেশের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশের নিচেই রয়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিনিয়ত চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। বিশেষ করে আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার যে ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে, তার বিপরীতে শর্তগুলো খুবই কঠিন। এসব শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। যার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনসাধারণের ওপর। এতে মূল্যস্ফীতির চাপও বাড়ছে; যা অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে অস্বস্তিকর চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর