দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ও অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ করে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন।
অন্যদিকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত করছে সরকারবিরোধী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি, খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির নানা ইস্যুতে জনমত তৈরি করছে তারা। একই সঙ্গে ভোটেরও প্রস্তুতি আছে তাদের।
বর্তমানে জেলার তিনটি আসনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে মহাজোটভুক্ত জাতীয় পার্টির (জাপা) দখলে। তবে এবার আওয়ামী লীগ তিনটি আসনই পেতে চায়। অন্যদিকে আসন পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে মরিয়া বিএনপি। জাতীয় পার্টিও ছাড় দিতে নারাজ। তারাও সদর আসনটি পুনরায় ধরে রাখতে চায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি চায়ের স্টল, মাঠ-ঘাট ও হাট-বাজারে একটাই আলোচনা- কে কোন দলের প্রার্থী হচ্ছেন।ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ির সঙ্গে রেলও চলছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য খুবই ধীরগতিতে চলে রেল কোচ। এখন বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে রেল চলাচল করতে পারে। রেল সেতুটিতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারবে। এর ওপর দিয়ে যে কোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে। কমে আসবে ভ্রমণকালও। জ্বালানি খরচও কমবে রেল বিভাগের। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু শুধু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চলের নয়, এর মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে দেশ। অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে রেলের মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়বে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর সামর্থ্যও বৃদ্ধি পাবে।’ ‘২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদী।’ জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হওয়ায় এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয়ে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এ সমস্যার সমাধানে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলসেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণ হচ্ছে ডাবল লেনের ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেলসেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাইকা। এই সেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে একসঙ্গে দুটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। নতুন রেলসেতু হলে নতুন রুট চালু করা হবে। বর্তমানে যে রেলসেতুগুলো রয়েছে তাতে একটি করে লাইন রয়েছে। এ সেতুটিতে দুটি রেললাইন বসবে। যার ফলে কোনো রেলকে সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। একসঙ্গে দুটো ট্রেন দুই দিকে চলে যেতে পারবে। সেই উদ্যোগের একটি অংশ উত্তর জনপদের রেলসংযোগ সংস্কার ও নতুন রেলপথ সংযোজনের কাজ এগিয়ে চলছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলছে। অন্য পাশে ভারতের ফুলবাড়ি অংশে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে সে দেশের রেল বিভাগ।
বর্তমানে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-কালিহাতী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা এই দুই প্রান্তে রেলসেতু নির্মাণে ৫০টি পিয়ারের মধ্যে ২০টি দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি পিয়ারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে, তবে দৃশ্যমান হয়নি, সেগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। সেতু এলাকায় সরেজমিন ঘুরে ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৫৭ ভাগ। মোট ৪.৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১.২ কিলোমিটার দৃশ্যমান। ৫০টি পিয়ারের মধ্যে ২০টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এই সেতুটি চালু হলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারবে। বর্তমানে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। আগামীতে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। শুধু উত্তরাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলই নয়, আন্তর্জাতিক ট্রেন যোগাযোগ বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রেন যোগাযোগ সহজ হলে উত্তরাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক কমে যাবে। যোগাযোগ খাতে নবদিগন্তের সূচনা হবে। খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার।’
বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেলসেতুর পশ্চিমেই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। এখানে উত্তর জনপদের ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছেন দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তারা। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু হলে এই শিল্পাঞ্চল থেকে রেলপথ, সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। একই সঙ্গে উত্তর জনপদে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী পরিবহনও সহজ হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। এতে এই জনপদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অপার সম্ভাবনা দেখছেন তারা। সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার রেলসেতু নির্মাণ হতে চলেছে। এই সেতু চালু হলে সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এ সেতুর মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যেরও দ্রুত প্রসার ঘটবে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে। সব জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু হলে রেলের শিডিউল বিপর্যয় হবে না। এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে।’