সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সুযোগ দেশে

বিজনেস সামিটে সম্ভাবনার তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। অবকাঠামো খাতে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এর দ্বিতীয় দিনে ‘বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনারে দেশের নীতিনির্ধারকরা বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছে বিনিয়োগের এই সম্ভাবনার তথ্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি অনেক পাল্টে গেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে দেশে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু অবকাঠামো খাতে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা যাবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ সবুজ বিনিয়োগে সুযোগ রয়েছে দেড় হাজার কোটি ডলারের। এসব বিনিয়োগ টেকসই করতে ইতোমধ্যে দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩৪টি সংস্থার দেড় শতাধিক সেবা সহজীকরণ করা হয়েছে। যেখানে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ওয়ান স্টপ সার্ভিস পাচ্ছেন। সেশনে বাংলাদেশের মূল খাতগুলোতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলোও তুলে ধরা 

 হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে বাংলাদেশে। এ দেশে বিনিয়োগ করলে ৪৭ থেকে ৮৪ শতাংশ শ্রমিক খাতে সাশ্রয় হবে। ম্যানেজারস স্যালারিতে সাশ্রয় হবে ৪১ থেকে ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া ৬ থেকে ৮৯ শতাংশ সাশ্রয়ী হবে পানিতে। বিদ্যুতে সাশ্রয় হবে ১০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।

বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ইতোমধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ অনেক দেশ বিনিয়োগ করেছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা এসেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে কাজ করছে দেশ। এ বিনিয়োগে আমাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এফবিসিসিআই। সম্মানীয় অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বিনিয়োগ-ব্যবসা সহজ করতে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সেতুসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। বিশ্বের অধিকাংশ সবুজ কারখানা এখন বাংলাদেশে। আমাদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ। বাংলাদেশ এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের গন্তব্য।

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশের চাকরি বাজার অন্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিরতিহীন সেবা শুরু হয়েছে। সুতরাং আপনারা (বিদেশি) বাংলাদেশে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন। টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেন, শিল্প-কারখানায় ইতোমধ্যে গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সংকট কেটে যাবে। কারখানাগুলোতে আগের চেয়ে আরও বেশি গ্যাসের চাপ পাওয়া যাবে। এই অনুষ্ঠানে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ওয়ালমার্টের জ্যেষ্ঠ পরিচালক শ্রী দেবী কালাভাকোনালু।

জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ২০১০ সালের সরকার সবার জন্য বিদ্যুতের যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল ২০২২ সালে এসে শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশ এত দ্রুত সময়ের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। সরকার যত দ্রুত সম্ভব সুলভ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে।

এগ্রি বিজনেস নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, অনেক খাদ্যপণ্য বিদেশে তৈরি করে আমাদের দেশে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পণ্য এখন বাংলাদেশে উৎপাদন করা সম্ভব। কারণ মাল্টা, ড্রাগন, স্টবেরি এখন আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। সুতরাং বিদেশি কোম্পানিগুলো আমাদের দেশে কারখানা স্থাপন করতে পারে। এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের কৃষিতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে এগোতে হবে। কৃষকের ন্যায্য পণ্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। নেসলে বাংলাদেশের এমডি দীপাল আবেইউইক্রেমা বলেন, নেসলে ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। নেসলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখেই বিনিয়োগ করেছে। যদিও এখন অনেক দেশি কোম্পানি মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছে।

এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন, অবকাঠামো, ভোগ্যপণ্য, ডিজিটাল ইকোনমি, জাপান-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও আগামীর সম্ভাবনা শীর্ষক প্লেনারি এবং পেরালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বিনিয়োগের প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা। গত ১১ মার্চ তিন দিনের ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি আজ শেষ হবে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিচ্ছেন। সামিটের মিডিয়া পার্টনার দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। সামিটের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন, যোগাযোগ, পোশাক ও বস্ত্র, হালকা প্রকৌশল, কৃষি ও স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো খাতে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর