রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঐক্য চেষ্টায় আওয়ামী লীগ, মরিয়া বিএনপি

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ঐক্য চেষ্টায় আওয়ামী লীগ, মরিয়া বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সব সংসদীয় আসনে নির্বাচনী বাতাস বইতে শুরু করেছে। বর্তমানে জেলার ছয়টি আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় জেলা আওয়ামী লীগে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য দ্বন্দ্ব রয়েছে।

বিএনপি মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। তবে দলীয় ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটি দেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যেও জোরালো গ্রুপিং রয়েছে।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সবদলই তৃণমূল ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (নাসিরনগর) : এ আসনে এবারও লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সবাই যার যার মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বললেও তাদের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে মাঠ গোছাতে কাজ করে যাচ্ছেন।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। আগামীতেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. নাজির মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ টি এম মনিরুজ্জামান সরকার, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ এহসান, অপর সহসভাপতি এ কে এম আলমগীর, আওয়ামী প্রজন্ম লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইহতেশামুল কামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক রাখেশ চন্দ্র সরকার প্রমুখ দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।

এ আসনে কখনো বিএনপি জয়ী হতে পারেনি। সাংগঠনিকভাবেও দলটি এ আসনে দুর্বল। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান একাধিকবার এ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এবারও বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মামুন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহানুল করিম গরিবুল্লাহ সেলিম। ইসলামিক ফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব ইসলাম উদ্দিন দুলাল। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের আবুল কাশেম মুহাম্মদ আশরাফুল হক, ইসলামী আন্দোলনের হুসেইন আহমদ, জেপি থেকে ফায়েজুল হক, বাসদ থেকে মো. বকুল হোসেন খান মনোনয়ন চাইবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (সরাইল-আশুগঞ্জ) : এ আসনটি কখনোই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি। এখানে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাই বিভিন্ন সময়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সবশেষ ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া। ২০১৮ সালে তিনি এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন মঈন। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়ার সঙ্গে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। তবে দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হক ও যুবলীগ নেতা আশরাফ উদ্দিন মন্তু।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এ আসনটিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আক্তার হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ দে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আহসান উদ্দিন খান শিপন মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নে জিয়াউল হক মৃধা দুবার এমপি নির্বাচিত হলেও বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কৃৃত। তিনি জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থি। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, জাকের পার্টি থেকে জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) থেকে মো. রাজ্জাক হোসেন মাঠে রয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (সদর-বিজয়নগর) : এ আসনটি ’৭৫-এর পরবর্তী বেশিরভাগ সময়ই ছিল বিএনপির দখলে। এখানকার বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের দলাদলির কারণে নেতাদের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আগামী নির্বাচনেও এ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও।

এ আসনে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নীরব ভোট রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে বিএনপির অন্য কারও মনোনয়ন চাওয়ার সম্ভাবনা কম। এ ছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীও নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (কসবা-আখাউড়া) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আগামী নির্বাচনেও এখানে তার কোনো বিকল্প প্রার্থী দেখছেন না দলের কেউই। সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলমের সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কিছুটা দূরত্ব থাকলেও সম্প্রতি এক সমাবেশে তাদের দুজনকে পাশাপাশি এক মঞ্চে দেখা গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুসলেহ উদ্দিন, জেলা কৃষক দলের সাবেক আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন হাজারী, বিএনপি নেতা কবীর আহমেদ ভূইয়া, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মোহন মনোনয়ন চাইবেন।

এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা সভাপতি তারেক এ আদেল ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সেলিম মাস্টার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (নবীনগর) : এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের এবাদুল করিম বুলবুল। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদল, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক আলামিনুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক জাকির আহম্মেদের নাম শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী থাকলেও রাজনীতির মাঠে তারা অনেকটাই নিষ্প্রভ। মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মান্নান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাজী নাজমুল হোসেন তাপস, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য তকদীর হোসেন মো. জসিম ও কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল হক সাইদ।

এ ছাড়া এরশাদের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা সভাপতি মোবারক হোসেন দুলু দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া- (বাঞ্ছারামপুর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম। আগামীতেও তিনি এ আসনের দলীয় শক্তিশালী প্রার্থী। ক্যাপ্টেন তাজ ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম, আমরা কজন মুজিব সেনার সভাপতি সাঈদ আহমেদ বাবু প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য ও ডিআইজি আবদুল খালেক দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ড. মো. সাইদুজ্জামান কামাল দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

সর্বশেষ খবর