মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

এখনো ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের শাস্তি দাবি

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা, রংপুর ও সাভার প্রতিনিধি

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর উপলক্ষে নিহতদের স্মরণ করেছেন তাদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সকাল থেকে সাভারের রানা প্লাজার সামনের অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আহত-নিহতদের স্বজন ও শ্রমিক নেতারা। এ সময় তারা ক্ষতিপূরণ ও ভবন মালিকসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দোষীদের পরিচয় জনগণের সামনে তুলে ধরে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ সবার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিকের জন্য অবিলম্বে মজুরি বোর্ড ও ২৫ হাজার টাকা মজুরি, মজুরি বৃদ্ধির আগ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান, আইন বদল করে জীবনের ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ভার ও প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন, রানা প্লাজা এলাকা যথাযথ সংরক্ষণ ও স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি, সব শ্রমিকের জন্য মালিক-সরকার ও বায়ারের উদ্যোগে জরুরি তহবিল গঠন এবং ২৪ এপ্রিল শোক ও নিরাপত্তা দিবস হিসেবে সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা অন্যতম। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার গণমাধ্যমে বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই আমরা বিভিন্ন দাবি তুলে আসছি। এই ১০ বছরে আমাদের দাবিগুলো পূরণ হলো না। এখনো আমরা একই দাবি জানাচ্ছি। রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক বুলবুলি আক্তার গণমাধ্যমে বলেন, রানা প্লাজা ধসে আমি পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। নামমাত্র অনুদান ছাড়া আমি ক্ষতিপূরণ পাইনি। বিচারও পাইনি। আমাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি। আমরা ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। রানা প্লাজার সামনে স্থাপিত অস্থায়ী বেদির সামনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ), ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, ল্যাম্পপোস্ট, গণমুক্তির গানের দল, রানা প্লাজা ভিকটিম এবং জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট, রানা প্লাজা সারভাইভারস অ্যাসোসিয়েশন ও রানা প্লাজা গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন।

এদিকে রানা প্লাজা ধসে আহত মেঘলা বেগম ও আবদুল লতিফদের মতো অনেকের নীরব দীর্ঘশ্বাস কারও নজরে আসছে না। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর গ্রামের মেঘলা বেগম স্বামী আবদুল বাতেনসহ কাজ করতেন রানা প্লাজায়। ঘাতক ভবন স্বামী আবদুল বাতেনের প্রাণ কেড়ে নেয়। মেঘলা গুরুতর আহত হন। সারা শরীরে এখনো অসংখ্য জখমের দাগ। কোমর ও পায়ে প্রচ ব্যথা। ক্ষতিপূরণের যে কটি টাকা পেয়েছিলেন তা দিয়ে চিকিৎসায় শেষ হয়ে গেছে। বছর তিনেক আগে নতুন করে ঘর করার স্বপ্নে একই গ্রামের নুরুল ইসলাম নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন। কন্যার বয়স যখন দুই মাস স্বামী নুরুল ইসলাম তাকে তালাক দিয়ে একই গ্রামের অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে গার্মেন্টে কাজ করছে। তিন বছরের সন্তান সুমাইয়াকে নিয়ে মেঘলা এখন বাবার বাড়িতে বোঝা হয়ে অবস্থান করছেন। মেঘলা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, শিশু বাচ্চার খাবার জোগাড় করা এখন সবচেয়ে বড় কষ্টের। মেঘলা বলেন, প্রথম দিকে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষ খোঁজখবর নিলেও এখন কেউ খোঁজ নেয় না। বাবার বাড়িতে বাড়তি বোঝা হয়ে জীবন কাটাচ্ছি। সাভারের ভবন ধসে আহত মিঠাপুকুরের নারায়ণপুর গ্রামের আবদুল লতিফ। সরকারি সাহায্য ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তা চিকিৎসাতেই শেষ হয়ে গেছে। তার পরেও তিনি জীবন সংগ্রমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে আর্থিক সংগতি না থাকায় তা করতে পারছেন না। রানা প্লাজা ধসে আহত হওয়ায় এত দিন বিয়ে করতে পারিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কয়েক বছর আগে এক জনপ্রতিনিধি একটি গাভি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। অদ্যাবধি তিনি আর আসেননি।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ধসে পড়ে রানা প্লাজা। এতে ১ হাজার ৩৮ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন আরও ১ হাজার ২০৫ জন। পরে এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুতে হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অন্য মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।

সর্বশেষ খবর